শাহাদাতের কাঁধে ৪১২ কোটি টাকার দেনা
৪ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৩১ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় ৪১২ কোটি টাকার দেনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। আইন অনুযায়ী শাহাদাতের মেয়াদকাল এক বছরের সামান্য বেশি। এ সময়ের মধ্যে পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করাই হবে শাহাদাতের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ— এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চসিকের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়নকাজের বিপরীতে চসিকের দেনা বেশি। তহবিল কম থাকায় অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ভাতাও ঠিকভাবে পরিশোধ করা যায়নি। তাই দেনার পরিমাণ বেড়েছে।
অন্যদিকে, ঠিক মতো বিল না পেলে কাজ শেষ করতে চান না ঠিকাদাররা। চসিকের যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিতে বড় প্রভাব ফেলে দেনা। ফলে পাওনা পরিশোধের উপায় বের করতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চসিকের দেনার পরিমাণ ৪১১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন কাজের বিপরীতে ঠিকাদারদের পাওনা ২৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ৬৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তাদের ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা বাকি আছে ৫৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সড়কবাতির বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এছাড়া, কর্ণফুলী নদীর তিনটি ঘাটের বিপরীতে পটিয়া, কর্ণফুলী এবং আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ চসিকের কাছে পাবে ৪ কোটি ২ লাখ ১৮ হাজার ৯ টাকা। সাবেক মেয়রদের আমলেও কাজ শেষ হওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের দেনা আছে, যার পরিমাণ ৮৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার ২০৭ টাকা।
অন্যান্য দেনার মধ্যে থোক বরাদ্দ খাতে ৪৭ কোটি ২৩ লাখ ৩২ হাজার ২৪৩ টাকা ও সাধারণ বরাদ্দের বিপরীতে ৯৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৬ টাকা পাবেন ঠিকাদাররা। একইসঙ্গে ৭৬-ট ধারায় সমাপ্ত উন্নয়ন কাজের বিপরীতেও এক কোটি ৪৯ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৬ পাবেন ঠিকাদাররা। চসিকের যান্ত্রিক শাখার ১২ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ টাকা ও বিদ্যুৎ শাখার ৮ কোটি ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ টাকা এবং নেজারত শাখার ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৫ টাকা দেনা আছে। এছাড়া কোভিড-১৯ প্রকল্পে ৮৫ লাখ ১০ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিভিন্ন পত্রিকা বিজ্ঞাপন খাতে চসিকের কাছে পাবে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫০২ টাকা।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাজেট প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। দেনা আছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার মতো। এটাই নতুন মেয়রের জন্য প্রথম ও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নতুন মেয়রকে এগিয়ে যেতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অক্টোবরে শপথ নিলে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ হবে ১৬ মাস। যদি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিন মাস আগে তাকে পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ১৩ মাস।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয় জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর মধ্যে, গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। আদালতের রায়ের সাতদিন পর গত ৮ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম