‘সংবিধানে যেনতেনভাবে হাত দেওয়া যাবে না’
৫ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৬
ঢাকা: জনগণ প্রয়োজন মনে করলে সংবিধানে সংশোধনী আনা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, তবে সংবিধানে যেনতেনভাবে হাত দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে সংবিধানের মূল ভিত্তিতে হাত না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদশে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক এবং ১৯৭২ এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. কামাল হোসেন সংবিধান ইস্যুতে বলেন, ‘প্রয়োজনে নীরব না থেকে সোচ্চার হতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন হতে পারে। আজ থেকে ১০ বছর আগে দেশের অবস্থা যেমন ছিল, এই মুহূর্তে সেটি নাও থাকতে পারে। এজন্য সংবিধান সংশোধন হতে পারে।’
’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের বলেন, ‘সংবিধানে ১৬টি সংশোধনী হয়েছে। যখন দেখেছে সংবিধানে কোনো ঘাটতি আছে, যে বিধান আছে তা মানুষের স্বার্থে কাজে লাগছে না, সেটা বদলানো হয়েছে। এ কারণে হয়েছে যে, এটা মানুষের করা আইন, এটাতে কোনো ভুল হলে বা সময়ের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শোধরাতে পারে। এটা করতে হবে মানুষদের নিয়ে। কোনো ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রপতিও যদি মনে করে এটা কলমের খোঁচা দিয়ে বদলাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরে আমরা দেখতে পেরেছি, আমাদের আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষাগুলোকে আরও দৃঢ় করতে হবে। আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বজায় রাখতে হবে। সকল স্তরে স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমাদের সংবিধানকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষা কবচ হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। যার সুরক্ষাবলয়ে কোনো নাগরিক অবিচার এবং অন্যায়ের আশঙ্কায় জীবন যাপন করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত ও সংবিধানকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা কবচ হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। আজকের প্রেক্ষাপটে, আমাদের সংবিধানকে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই সংবিধান যাতে কোনোভাবেই অত্যাচারের সুযোগ না দেয় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘মানুষের অধিকার রক্ষার কাজ শুরু করেছিলাম। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের মানুষের সংবিধানিক অধিকার রক্ষার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি হিসাবে এই সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এই সংবিধানের ভিত্তি ছিল- আমাদের ত্যাগ এবং সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা। এই সংবিধানের আদর্শগত ভিত্তি ছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা।’
তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত এবং সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিসত্তা, রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো পরিচয়ের কারণে বৈষম্য হতে দেওয়া যাবে না। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল সাংবিধানিক সংস্কার আমাদের করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, আইনজীবী এবং বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক সমাজ হিসেবে- এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় আপনারা অংশগ্রহণ করুন। সাধারণ জনগণকে আপনাদের মতামত জানান। এবং সাধারণ জনগণের মতামত যাতে সংশোধন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়- সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। সংবিধানের জন্য আপনারা শক্তির প্রতীক হয়ে উঠুন।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রমুখ।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম