কমলা-ট্রাম্পের ছায়ায় স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থী, ভূমিকা রাখবেন ফল নির্ধারণেও
৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৩০
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস আর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মুখোমুখি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। বিশ্বরাজনীতির অনেক সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) মুখোমুখি হচ্ছেন দুই প্রার্থী। সবশেষ জরিপ বলছে, প্রধান এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস মাত্র ১ শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান এই দুই প্রার্থীর ছায়ায় একেবারেই ঢেকে গেছেন স্বতন্ত্র চার প্রার্থী। নির্বাচনসংক্রান্ত বেশির ভাগ আলোচনায় তাদের উপস্থিতি শূন্য। তবে কমলা-ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত এই স্বতন্ত্ররাও নিয়ামক ভূমিকায় পরিণত হয়ে যেতে পারেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ বা ‘সুইং স্টেট’গুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এসব সুইং স্টেটেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কমলা বা ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে উঠতে পারেন। কারণ একেকটি সুইং স্টেটে একেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কিছুটা হলেও শক্ত অবস্থান রয়েছে, যা কমলা বা ট্রাম্পের তুলনায় সামান্য হলেও তাদের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
গত সপ্তাহের ইকোনমিস্ট-ইউগভ জরিপ অনুযায়ী, কোনো কোনো রাজ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারও কারও তিন থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত ভোটার সমর্থন রয়েছে। অথচ এসব রাজ্যে ট্রাম্প বা কমলা একজন আরেকজনের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন মাত্র এক বা দুই শতাংশ সমর্থনে। ফলে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন থেকে চার শতাংশ ভোট পার্থক্য গড়ে দিতে পারে ট্রাম্প-কমলার মধ্যে।
ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটরা স্বতন্ত্র বা তৃতীয়-পক্ষের প্রার্থীদের নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে জিন স্টেইন ও কর্নেল ওয়েস্টের অবস্থান কমলার বিপরীতে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের তুলনায় কমলার সমর্থকরাই এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে ঝুঁকছেন বেশি। টাইমস-সিয়েনা জাতীয় জরিপ অনুযায়ী যেসব অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ ও কমলা ৪৬ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা না থাকলে সেসব অঙ্গরাজ্যে ৪৮-৪৮ শতাংশে টাই হতে পারত।
এক নজরে স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থী
জিন স্টেইন
গ্রিন পার্টির প্রার্থী চিকিৎসক ও পরিবেশকর্মী জিল স্টেইন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নতুন নয়। এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালেও গ্রিন পার্টির সদস্য হিসাবে হোয়াইট হাউজের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। গত বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি এ বছরের নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো দলের মনোনয়ন চাইবেন। শেষ পর্যন্ত তা পেয়েছেনও।
কর্নেল ওয়েস্ট
কর্নেল ওয়েস্ট পেশায় একজন দার্শনিক, অধিকার কর্মী ও লেখক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিয়ন থিওলজিক্যাল সেমিনারিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। পিপলস পার্টির হয়ে গত বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেন। নির্বাচনি প্রচারে দারিদ্র্যের অবসান ও আবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ইস্যুতে তিনি ইসরায়েলের একজন বড় সমালোচকও।
চেজ অলিভার
লিবার্টারিয়ান পার্টির অধীনে ২০২৪ সালে হোয়াইট হাউজের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অলিভার। এর আগে ২০২০ সালে জর্জিয়ার পঞ্চম কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তবে জয় পাননি। ২০২২ সালে মার্কিন সিনেটে একটি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
ক্লদিয়া ডি লা ক্রুজ
সোস্যালিজম অ্যান্ড লিবারেশন পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ক্লদিয়া। আমেরিকাকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি ভোটারদের। নির্বাচনে মোট ১৯টি রাজ্যে ব্যালটে নাম দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আরও ২৪টি রাজ্যে রেখেছেন ‘রাইট-ইন’ অপশন। অর্থাৎ ব্যালটে না থাকলেও ভোটাররা চাইলে তার নাম লিখে ভোট দিতে পারবেন। গত বুধবার তিনি কর্নেল ওয়েস্টের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। ভোটারদের তারা বলেছেন, কোনো রাজ্যে তাদের যেকোনো একজন প্রার্থী হয়ে থাকলে দুজনের সমর্থকরাই যেন ওই একজনকেই ভোট দেন।
কোন সুইং স্টেটে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবস্থান কেমন
এই নির্বাচনে চেজ অলিভার প্রতিটি সুইং স্টেটে ব্যালট দিয়েছেন। জিন স্টেইন ও কর্নেল ওয়েস্টের বেশিরভাগ রাজ্যে ব্যালটে রয়েছে। অন্যদিকে কেনেডি কেবল মিশিগান ও উইসকনসিনে ব্যালটে রয়েছেন।
অ্যারিজোনা
এই অঙ্গরাজ্যে স্টেইন ও অলিভারের ব্যালট রয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপে স্টেইনের ১ শতাংশ ও অলিভার ২ শতাংশ সর্মথন পেয়েছেন। একই জরিপে কমলা ট্রাম্পের তুলনায় মাত্র ১ শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে আছে। ফলে স্টেইন ও অলিভারের ৩ শতাংশ সমর্থন বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মিশিগান
এই রাজ্যে স্টেইন, অলিভার, ওয়েস্ট ও কেনেডি— চারজনেরই ব্যালট রয়েছে। ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপে অনুযায়ী কেনেডির ৩ শতাংশ, স্টেইনের ২ শতাংশ ও ওয়েস্ট ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের মোট ভোটার সমর্থন ৬ শতাংশ।
উইসকনসিন
স্টেইন, অলিভার, ওয়েস্ট ও কেনেডির ব্যালট আছে এই রাজ্যে। সিএনএন/এসএসআরএস জরিপ অনুযায়ী, কেনেডির ১ শতাংশ ও স্টেইনের ১ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। একই জরিপে ট্রাম্প কমলার চেয়ে ৬ শতাংশ এগিয়ে আছেন। সে হিসাবে এ রাজ্যে স্বতন্ত্ররা খুব একটা প্রভাব নাও ফেলতে পারেন।
জর্জিয়া
স্টেইন ও অলিভার ব্যালট রয়েছে এই রাজ্যে। ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপ অনুযায়ী, স্টেইনের ১ শতাংশ এবং অলিভারের ১ শতাংশ ভোটার সমর্থন রয়েছে রাজ্যটিতে। একই জরিপে কমলা ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ ভোটার সমর্থনে এগিয়ে আছেন। তাই স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর সম্মিলিত ভোটার সমর্থন মাত্র ২ শতাংশ হলেও সেটিও বড় ভূমিকা রাখতে পারে ট্রাম্প-কমলার জয়-পরাজয় নির্ধারণে।
নেভাদা
অলিভারের এই অঙ্গরাজ্যে ব্যালট আছে। ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপ অনুসারে তার ১ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। একই জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ এগিয়ে আছেন কমলা। অলিভারের ১ শতাংশ সমর্থনের গুরুত্বও তাই কম না।
নর্থ ক্যারোলাইনা
স্টেইন, অলিভার ও ওয়েস্টের ব্যালট আছে এ রাজ্যে। ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপ অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রার্থীর দখলে ১ শতাংশ সমর্থন আছে। একই জরিপে কমলা ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ এগিয়ে আছেন। তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৩ শতাংশ সমর্থন তাই যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ।
পেনসিলভ্যানিয়া
ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে স্বীকৃত পেনসিলভ্যানিয়ায় ব্যালট রয়েছে স্টেইন ও অলিভারের। ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন/এসএসআরএস জরিপ অনুযায়ী, তাদের প্রত্যেকের ১ শতাংশ ভোটার সমর্থন রয়েছে। একই জরিপে কমলা ও ট্রাম্প সমান ৪৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। স্টেইন-অলিভারের মিলিত ২ শতাংশ সমর্থন তাই ট্রাম্প-কমলার এই রাজ্যে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর
কমলা হ্যারিস কর্নেল ওয়েস্ট চেজ অলিভার জিন স্টেইন ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সুইং স্টেট