আন্দোলনের মুখে বদলালো রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ
৫ নভেম্বর ২০২৪ ২০:২৩
ঢাকা: শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তার স্থলে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের পারসোনেল-১ শাখার উপসচিব দুর-রে-শাহওয়াজের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার এর নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাগণকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নামের পার্শ্বে বর্ণিত পদে ও কর্মস্থলে পদায়ন করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, বদলি/পদায়নকৃত কর্মকর্তাগণ আগামী ১০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে বদলি/পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় ১১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ পূর্বাহ্নে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (Stand Release) বলে গণ্য হবেন। বদলি/পদায়নকৃত কর্মকর্তাগণ অবমুক্তির সময় বর্তমান কর্মস্থল হতে ছাড়পত্র গ্রহণ করবেন এবং এইচআরএম ডাটাবেজ থেকে মুভ আউট হবেন ও যোগদানের পর বদলিকৃত কর্মস্থলে মুভ ইন হবেন। বর্ণিত কর্মকর্তাগণ যোগদানের পর পিডিএস আপডেট করবেন। পদায়নকৃত কর্মকর্তার যোগদানপত্র স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পার-১ শাখার ই-মেইল [email protected] প্রেরণ করবেন।’
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ওএসডি করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠিতে কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর উপাধ্যক্ষ করা হয় সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে।
পরবর্তীতে বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকেই ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন রমেকের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওইদিন তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তৎকালীন উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান। এ ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট বদলাতে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন তিনি এবং সেই সময়ের অধ্যক্ষ। তাছাড়া ডা. মাহফুজ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদেরও (স্বাচিপ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডা. মাহফুজার রহমান উপাধ্যক্ষ থাকাকালে তার কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বিশেষত ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত সারাক্ষণই তার কক্ষে বসে থাকতো। এ নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলেও আপত্তি তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে টানা পাঁচ বছর উপাধ্যক্ষ ও চার বছর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডা. মো. মাহফুজার রহমান। এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
অধ্যক্ষকে অপসারণ দাবির ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল দুই ঘণ্টার শাট ডাউন পালন করেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে, সকালে কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/এসবি/এইচআই