Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকায় ৮টি ‘আয়নাঘরে’র সন্ধান পেয়েছে গুম তদন্ত কমিশন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৪৬

মঙ্গলবার গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সংবাদ সম্মেলন করেছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা ও এর আশপাশে আটটি আয়নাঘর বা গোপন বন্দিশালা খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্তদ কমিশন। রাজনৈতিক ও জঙ্গি সন্দেহসহ চার কারণে অধিকাংশ গুম করা হয়েছিল বলে কমিশন জানায়।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কমিশনের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো জানানো হয়।

কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের বন্দিশালা বা আয়নাঘরগুলো পরিদর্শন করার কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে ডিজিএফআই, র‌্যাব-১ (উত্তরা), র‌্যাব হেডকোয়ার্টার, র‌্যাব-১১ (নারায়ণগঞ্জ), র‌্যাব-২ (বছিলা), র‌্যাব-২ ক্রাইম ডিভিশন সেন্টার (আগারগাঁও) পরিদর্শন করেছি। ডিবি কার্যালয় আগে পরিদর্শন করা হয়েছে।

কী কারণে গুম করা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। আবার কিছু ফেসবুকে সমালোচনা করার কারণে হয়েছে। কিছু লোক গুম হয়েছে যাদের কোনো পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি ছিল না। কিছু আছে যারা সরকারে সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মিডিয়াতে। সেনাবাহিনীতে যেসব সদস্যকে গুম করা হয়েছে, তাদের কী কারণ আছে সেটাই বোঝা যায়নি। কারা তুলে নিয়ে গেছিল, অনেককেই শনাক্ত করতে পারেনি।

কমিশনের সভাপতি আরও বলেন, এই মুহূর্তে কতজন গুম আছেন, এটা বলা মুশকিল। অনেকগুলো কেসের গুম কী কারণে, তা বুঝতে পারছি না। প্রমাণ মিলছে না। আমাদের আওতায় পড়ে না— এমন ২২টি কেস পেয়েছি। হয়তো কোনো ভাড়াটিয়া লোকদের দিয়ে গুম করেছিল। সেই কেসগুলো পুলিশদের কাছে পাঠিয়ে দেবো, তারা তদন্ত করবে।

৫ আগস্টের পর তিনজন গুম থেকে বের হয়েছেন। এদের বাইরে কী আর কেউ আছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে গুম কমিশনের সদস্য নুর খান বলেন, তিনজনের বাইরে আরও দুয়েকজনের খবর আমরা পেয়েছি। এরই মধ্যে কথাও বলেছি। এখনই বলা যাবে না যে ৫ তারিখের পর কতজন বের হয়েছে। পত্রপত্রিকা ও বিভিন্নভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ২০০ মানুষের সন্ধান এখনো মেলেনি। আমরা বলতে পারছি না যে এটা গুম কি গুম না। তবে অধিকাংশ পরিবার থেকে অভিযোগ করছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

নুর খান লিটন আরও বলেন, ‘এ সংক্রান্ত যতগুলো খবর পত্রপত্রিকা করেছে, সবগুলো ঘটনার দালিলিক প্রমাণ পেয়ে গেছি। মানুষ গুম থাকা অবস্থায় কীভাবে রোজনামচা লেখে, কীভাবে দিন গণনা করে— এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আয়নাঘরের চেয়েও নিকৃষ্টতম সেল কাছাকাছি জায়গাতেই ছিল। আমরা সেগুলো পরিদর্শন করেছি, দেখেছি।’

গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আয়নাঘরের মতো যতগুলো জায়গা আমরা গিয়েছি, সেখানে বন্দি অবস্থায় কাউকে পাইনি। অনেকগুলো বন্দিশালা ধ্বংস করা হয়েছে। ভিকটিমের বর্ণনা অনুযায়ী আমরা সেগুলো পেয়েছি। ৪০০ কেসের মধ্যে ১৭২টিতে পেয়েছি র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা, সিটিটিসির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি ৩৭টি কেসে, ডিবি পুলিশের ৫৫টি, ডিজিএফআই ২৬ট, ২৫টি কেসে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। সাদা পোশাকে পরিচয়ের পেয়েছি ৬৮টি কেসে।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি অনেক জায়গায় বিভিন্ন বাহিনী সেফ হাউজ আছে। আমাদের সোর্সের মাধ্যমে আমরা সেগুলোর এক্স্যাক্ট লোকেশন জানার চেষ্টা করছি।

কমিশনের আরেক সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, চারটি কারণে অধিকাংশ গুম করা হয়েছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক, জঙ্গি সন্দেহে, ব্যবসায়িক ও পারিবারিক কারণেও মানুষ গুম হয়েছেন। গোপন বন্দিশালা এ পর্যন্ত আমরা আটটি আনকাভার করেছি। আমাদের ধারণা, ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় গোপন বন্দিশালা পাব। ঢাকার বাইরেও প্রতিটি এলাকা পাওয়া যেতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আলামত ধ্বংস করা থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করে এখন আর লাভ নেই। যে ভিকটিম বেঁচে আছে, তাদের জবানবন্দি অলরেডি কালেক্ট করা হয়েছে। সেই জবানবন্দি অনুযায়ী আমরা গোপন বন্দিশালা খুঁজে বের করব। গোপন বন্দিশালা ধ্বংস করার আগে নিজেদের রক্ষা করুন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

আয়নাঘর গুম কমিশন গুম তদন্ত কমিশন গোপন বন্দিশালা

বিজ্ঞাপন

বিজয়ের মাসে ‘নয়া মানুষ’
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর