ইজতেমায় সাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি, অনুসারীরা বললেন বৈষম্যের শিকার
৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৫ | আপডেট: ৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৪
ঢাকা: টঙ্গীতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমায় মওলানা সাদ কন্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার অনুসারীরা। বলেছেন, মওলানা সাদসহ তাদের আওয়ামী লীগপন্থি বলা হলেও তারাই বরং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়ে কেরাম ও সাথীদের পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, আল্লাহর হুকুমে বর্তমান সরকারের সহায়তায় ইনশাল্লাহ তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মওলানা সাদ কন্ধলভী বিশ্ব ইজতেমায় উপস্থিত হবেন। তিনি উপস্থিত হলে ইজতেমার ইতিহাস ফিরে আসবে। ৫০ হাজারেও বেশি দেশি-বিদেশি মেহমান ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সারাবাংলা ডটনেটের এক প্রশ্নের জবাবে নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে ঐক্যের ডাক দিয়ে সাতটি সমাধানমূলক প্রস্তাব ও পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন সাদপন্থি আলেমরা।
সংবাদ সম্মেলনে তাবলিগ নেতারা বলেন, অতীতে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ বা ভারত কারওই দালাল নই। আমরা আল্লাহর পথে চলি। আমরা শান্তি চাই।
আল্লাহ মওলানা সাদ কন্ধলভীর ইজতেমায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারাজ হলে আপনাদের পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমারা জনদুর্ভোগের মতো কোনো কর্মসূচি ঘোষণা কিংবা পালন করব না। আমরা মসজিদে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করব।
এর আগে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখের ব্যানারে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে দাবি জানানো হয়, মওলানা সাদকে যেন বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া না হয়। মওলানা জুবায়েরপন্থিরা মূলত সম্মেলনটির আয়োজক ছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থি আলেমরা বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত জুবায়েরপন্থি তাবলীগের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ দেশের কতিপয় উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে অসংখ্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তাদের অনুষ্ঠানে জনজীবনে ভোগান্তি নেমে আসে। অনেক ভাই-বোন অপমানের শিকার হয়েছেন।
ঐক্যের পক্ষে রয়েছেন জানিয়ে আলেমরা বলেন, আমরা ৩ নভেম্বর জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের আলেমদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তাবলিগ জামাতের সাথীরা দলমত নির্বিশেষে সব উলামায়ে কেরামের হিতাকাঙ্ক্ষী। উলামায়ে কেরাম আমাদের মাথার তাজ, সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। তবে জুবায়েরপন্থিদের উসকানিতে কিছু অদূরদর্শী আলেম আপসমূলক সমাধানে না এসে তাবলীগ ও বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে বিভেদ দূর করে ঐক্য স্থাপনের জন্য একটি আলোচনা আয়োজনের সাতটি সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করেন আলেমরা। এগুলো হলো—
দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানি (দা. বা.) ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ (দা. বা.) ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন;
সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন;
গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন এবং এটি রেকর্ড ও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে;
সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে;
উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন;
বিতর্কটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে অনুষ্ঠিত হবে; এবং
বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
নেতারা বলেন, আমরা সবসময় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের পক্ষে। আমরা ঘরোয়া বৈঠকে বসে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। এ সময় তারা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন—
বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে;
গত সাত বছরের বৈষম্য দূর করে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব নিজামুদ্দীন মারকাযের অনুসারী মূলধারার তাবলিগি সাথীদের বুঝিয়ে দিতে হবে;
কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতিমা ময়দানের বৈষম্য দূর করে তাবলিগের মূলধারার সাথীদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে;
২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে মূলধারার দুজন সাথীকে হত্যা ও পরে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা নিউমার্কেটে তিনজন সাথীকে হত্যা ও চার শতাধিক সাথীকে মারত্মক আহত করার অভিযোগে জুবায়েরপন্থিদের নামে দায়ের করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে; এবং
সারা দেশের সব মসজিদে ধর্মীয় উসকানি ও ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত তৈরি হয়— এমন বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন জিয়াবিন কাসেম। এ সময় মুফতি মোয়াজ বীন নূর, মুফতি আজিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আতাউর রহমান, আরিফুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমপি/টিআর