দরিদ্র দেশে কম স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো
৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০০
উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে আর্থসামাজিক নানা খাতের বৈষম্য নতুন কিছু নয়। উন্নত দেশের তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোর জীবনমানও স্বাভাবিকভাবেই কম উন্নত, যাদের সবসময় চাহিদা আর জোগানের মধ্যে সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হয়। এবারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আরেক বৈষম্যের খবর— দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও কম স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছে!
প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের বড় বড় খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই করছে এই বৈষম্য। উন্নত দেশগুলোতে তারা যে মানের খাদ্য ও পানীয় বিক্রি করছে, দরিদ্র দেশগুলোতে তারাই বিক্রি করছে তুলনামূলক কম মানের খাবার।
অ্যাকসেস টু নিউট্রিশন ইনিশিয়েটিভের (এটিএনআই) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেসলে বা ইউনিলিভার থেকে শুরু করে পেপসিকোর মতো বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের নাম রয়েছে এই তালিকায়।
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বহুল ব্যবহৃত একটি রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩০টি খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্যের ওপর জরিপ চালায় অ্যাকসেস টু নিউট্রিশন ইনিশিয়েটিভ।
তাদের সেই জরিপের ফলাফল বলছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় কম স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করা হচ্ছে।
খাবারের স্বাস্থ্যমান নির্ধারণ করার জন্য ওই রেটিং পদ্ধতিতে হেলথ স্টার দেওয়া হয়। সবচেয়ে ভালো মানের খাদ্যপণ্যের স্কোর ফাইভ স্টার বা ৫। রেটিংয়ে কোনো খাবারের মান ৩.৫ পাওয়া গেলে সেটিকে স্বাস্থ্যকর বিবেচনা করা হয়।
এটিএনআই যে জরিপ চালিয়েছে, তাতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নেসলে-ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর খাদ্যপণ্যে রেটিং ১.৮ পর্যন্ত নেমে গেছে। উন্নত দেশগুলোতেও কিছু পণ্য পরীক্ষা করে সেগুলোর ২.৩ রেটিং পেয়েছে সংস্থাটি।
জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা এটিএনআইয়ের গবেষণা পরিচালক মার্ক উইন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এই কোম্পানিগুলো বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে বেশি সক্রিয় এবং সেখানে তারা যেসব পণ্য বিক্রি করছে সেগুলো স্বাস্থ্যকর না। এ বিষয়ে এসব দেশের সরকারগুলোকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’
এটিএনআই এবারই প্রথম খাদ্যপণ্যের রেটিংকে নিম্ন ও উচ্চ আয়ের দেশে বিভক্ত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যের এই মানের সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্কও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ওবেসিটি বা স্থূলতায় আক্রান্ত। অতিরিক্ত ওজনের এসব মানুষের ৭০ শতাংশের বসবাস নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশেগুলোতে।
খাবারের মান নিয়ে পরিচালিত এই প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে এক বার্তায় নেসলের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আমাদের আরও পুষ্টিকর খাবারের বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষকে আরও সুষম খাদ্য খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
খাদ্যের মান নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন অবশ্য নতুন নয়।
এর আগে পেপসিকো গত বছর আলুর চিপসে সোডিয়ামের পরিমাণ কমাতে তাদের পণ্যে গোটা শস্যযুক্ত উপাদান যোগ করার পরিকল্পনার কথা জানায়।
তবে এ প্রতিবেদন নিয়ে পেপসিকোর মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ/টিআর