টালমাটাল চীনা অর্থনীতি, পুনরুদ্ধারে জল ঢেলে দেবেন ট্রাম্প?
৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০৩
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ভুগছে চীনের অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দাম হারাচ্ছে সম্পদ। সরকারের ঋণ বাড়ছে, বাড়ছে বেকারত্ব। ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। সব মিলিয়ে দেশটির অর্থনীতি টালমাটাল।
এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন পরিকল্পনার দিকে হাঁটছেন শি জিনপিং। চীনা আইনসভার নির্বাহী সংস্থা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) স্ট্যান্ডিং কমিটি বেশকিছু ঘোষণাও দিয়েছে, যেগুলোকে গুরুত্বের দিক থেকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
চীনের এসব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে সন্দেহ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় চীনকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, এবার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এটা জিনপিংয়ের চীনকে প্রযুক্তি খাতের ‘পাওয়ারহাউজ’ হিসেবে রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষায় হতে পারে বড় প্রতিবন্ধকতা। সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশটির উৎপাদন খাতেও। সব মিলিয়ে চীন ও আমেরিকার মধ্যে ফের বাড়তে পারে উত্তেজনা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনা পণ্যে ২৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করলে তা দেশটির অর্থনীতিকে বেশ চাপে ফেলে। বর্তমানে চীন আরও দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। কারণ মহামারির কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরও অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন উন্নত উৎপাদন ও সবুজ শিল্পের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সৌর বিদ্যুতের প্যানেল, ইলেকট্রিক যানবাহন ও লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে চীন বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) তথ্য, বিশ্বব্যাপী সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলের ৮০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে চীন। ২০২৩ সালে এই খাতগুলোর রফতানি ৩০ শতাংশ বেড়ে এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান অতিক্রম করেছে, যা চীনের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে।
তবে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষত আমেরিকা ও ইউরোপ চীনের এসব উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউরোপ গত মাসে চীনা তৈরি ইলেকট্রিক গাড়ির ওপর শুল্ক ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এখন ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে আসায় এ প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হতে পারে, যা চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
চীন যে এখন শুধু রফতানির মাধ্যমে সংকট থেকে বের হতে পারবে না, তা বিশেষজ্ঞরা বারবার উল্লেখ করেছেন। তাই দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চীনকে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা বাড়ানো ও রফতানি নির্ভরতার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
সারাবাংলা/এনজে/টিআর