হাইকোর্টের রুল সত্ত্বেও নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছে নেপ
৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:১৮
ঢাকা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিতে (নেপ) ষষ্ঠ গ্রেডে বিশেষজ্ঞ ও প্রোগ্রামার এবং নবম গ্রেডে সহকারী বিশেষজ্ঞ পদে নিয়োগ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তিনটি পদে লিখিত পরীক্ষা আগামীকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) এবং রোববার (১০ নভেম্বর) মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও পরীক্ষাগুলো যে নিয়োগ প্রবিধানমালা অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রুলে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি এর কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২৩ কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববর্হিভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাজেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এ রুল জারি করেন। একইসঙ্গে আদালত বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় আদেশ জরুরি মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ হাসান জুবায়ের ও তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. গোলাম রহমান ও শামীমা সুলতানা দীপ্তি।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে গত ১৮ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সহকারী বিশেষজ্ঞের ১৫টি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। পরে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে গত ৪ নভেম্বর পঞ্চগড় প্রাথমকি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর (বিজ্ঞান) মোহাম্মদ জাকির হোসেন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেন।
রিটের পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে রুলের আদেশ বিশেষ বার্তার (স্পেশাল মেসেঞ্জার) মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ (অ্যাবসুলেট) ঘোষণা করা হলে পরবর্তী সময়ে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’
তিনি জানান, BCS Recruitment Rules, 1981 (সংশোধিত ১৯৮৯) (primary Education Directorate) অনুযায়ী জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) এর পরিচালক (ক্রমিক নং ২৭), উপপরিচালক (২৮(a), বিশেষজ্ঞ (২৮(b), সহকারী বিশেষজ্ঞ (চারু ও কারুকলা ব্যতীত) ৩১(a), সহকারী বিশেষজ্ঞ (চারু ও কারুকলা ৩১(b), পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ৩১(c) পদগুলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরাধীন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত পদ। ওই নিয়োগবিধি অনুযায়ী জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) ২২টি সহকারী বিশেষজ্ঞ পদে পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের এবং অন্যান্য উচ্চতর পদে পিটিআইসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিধান ছিল।
তিনি আরও জানান, এরপর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২৩ প্রণীত হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নতুন নিয়োগবিধিমালা, ২০২৩-এ ওই পদগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও নেপের নিয়োগবিধিমালা প্রণয়নের সময় ওই পদগুলো BCS Recruitment Rules, 1981 (সংশোধিত-১৯৮৯) থেকে এন্ট্রি বাতিল করা হয়নি এবং পদগুলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরেও স্থানান্তর করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে সম্প্রতি নেপের বিশেষজ্ঞ ও সহকারী বিশেষজ্ঞ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পিটিআই কর্মকর্তারা পদোন্নতির বিদ্যমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এ কারণে রিটটি দায়ের করা হয়েছে।’
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের রুল জারির কপি আমরা এখনও হাতে পাইনি। হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারব। যদি কোনো রুল ইস্যু হয়ে থাকে তাহলে আমরা রুলের জবাব দেবো। তবে আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নিয়োগ পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কর্মচারী রিট দায়ের করেছেন, আমার মতে- তার তো রিট করার এখতিয়ারই থাকার কথা না। কারণ, নেপ একটি অটোনোমাস বডি দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান (নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হয়)। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। দুটো ভিন্ন দফতর হওয়ায় এক দফতরের কর্মচারী আরেক দফতরের সুযোগ-সুবিধা চেয়ে আবেদনই তো করতে পারে না। সে কারণে এই রিটই তো চলতে পারে না।’
উল্লেখ্য, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২৩ এ সহকারী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও পদোন্নতি সম্পর্কে বলা হয়েছে- মোট পদের শতকরা ২০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং শতকরা ৮০ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে নেওয়া হবে। তবে পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর ওই পদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলা হয়েছে-
(ক) সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বা শরীরচর্চা শিক্ষক পদে অন্যূন ৮ (আট) বৎসরের চাকরি; এবং (খ) ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) ডিগ্রি থাকতে হবে।
সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে: (ক) কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে যেকোনো বিষয়ে প্রথম শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ-তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ-তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতক ডিগ্রি অথবা অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে ৪ (চার) বৎসর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি; এবং (খ) অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি থাকতে হবে।
প্রেষণে বদলির ক্ষেত্রে: সমপদ মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে হতে হবে। আর সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে অন্যূন ৮ (আট) বৎসরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
রিটকারীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন প্রবিধানমালাতে পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতি পেয়ে সহকারী বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এ কারণে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারি করে জরুরি ভিত্তিতে তা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম