কেমন ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট?
১০ নভেম্বর ২০২৪ ১০:০৮
১০ নভেম্বর, ২০০০। সকালের সূর্য উকি দেওয়ার পর থেকেই পুরো ঢাকাতে সাজ সাজ রব। ঢাকা শহরের সব স্রোত যেন ছুটছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দিকে। সবাই যে সাক্ষী হতে চায় ইতিহাসের! এমন দিন যে খুব কমই এসেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে। শত বাধা বিপত্তি, উত্থান পতন পেরিয়ে বাংলাদেশ খেলতে যাচ্ছে তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট, এমন দৃশ্য মাঠে বসে দেখার সুযোগ কি কেউ হাতছাড়া করতে চায়? নানা আয়োজনে রাঙ্গানো হলো ম্যাচের আগের অনুষ্ঠান। টস করতে নামলেন নাইমুর রহমান দুর্জয় ও সৌরভ গাঙ্গুলি। দুর্জয় কয়েন শূন্য তোলার সাথেই বাংলাদেশ প্রবেশ করল টেস্ট ক্রিকেটের এলিট জগতে।
আজ থেকে ঠিক ২৪ বছর আগে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। সাদা পোশাকে মাঠে নামার পথটা সহজ ছিল না বাংলাদেশের। বহু বাধা পেরিয়ে টেস্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ দল।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচটি ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের ১৫১২তম ম্যাচ। বাংলাদেশের মাটিতে সেটা ছিল ৯ম টেস্ট ম্যাচ। আগের প্রতিটি ম্যাচই হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে সাতটি অনুষ্ঠিত হয় যখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল। অপরটি ছিল এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। সেখানে খেলেছিল পাকিস্তান ও শ্রীলংকা।
অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নেমে প্রথম লড়াইটা জিতেছিলেন দুর্জয়ই। দুর্জয়ের টসে জেতার পর উল্লাসে ফেটে পড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো দর্শক। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। মাত্র ১০ রানের মাঝেই ওপেনার মেহরাব হোসেনকে হারায় তারা। ৪৪ রানের মাথায় ফেরেন আরেক ওপেনার শাহরিয়ার হোসেনও। তবে হাবিবুল বাশার ও আমিনুল হক নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে গড়েছেন ইতিহাস।
ভারতীয় বোলারদের দারুণভাবে সামলে নিয়ে অভিষেক টেস্টেই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান বাশার। তিন অংক অবশ্য ছুঁতে পারেননি তিনি। ১১২ বলে ৭১ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস শেষ হয় জহির খানের বলে। বাশার না পারলেও ম্যাজিকাল সেই ফিগার ছুঁয়েছেন আমিনুল।
অস্ট্রেলিয়ান চার্লস ব্যানারম্যান ও জিম্বাবুয়ের ডেভ হটনের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিজ দেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের আমিনুল। সব মিলিয়ে ইতিহাসের ৪৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পান তিনি। তার ১৪৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসের সুবাদেই নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪০০ ছোঁয় বাংলাদেশের স্কোর।
প্রথম ইনিংসে বোলিং নেমেও ভারতকে খুব একটা সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশ। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন অধিনায়ক দুর্জয়। তার ফাইফারের সুবাদেই প্রথম ইনিংসে বড় লিড নিতে পারেনি ভারত। ১৩২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন দুর্জয়। অভিষেকে এটি টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। মোহাম্মদ রফিকের ৩ উইকেট ও দুর্জয়ের ৬ উইকেটের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ভারত গুটিয়ে যায় ৪২৯ রানে।
২৯ রানের লিড সামনে রেখে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এবার অবশ্য প্রথম ইনিংসের ধারেকাছেও যায়নি বাংলাদেশের ব্যাটিং। যে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ৪০০, তারাই দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ৯১ রানে! দুই অংক ছুঁতে পেরেছিলেন শুধুই বাশার ও খালেদ মাসুদ।
ম্যাচ জিততে ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৬৩। ৯ উইকেট হাতে রেখে অনায়াসেই সেই টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে ভারত। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ শেষ হয় বড় হারে।
শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বপ্নটা হয়তো কেউই দেখেননি। সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দলের ১১ ক্রিকেটারের মাঠে নামাটাই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে আজন্ম এক স্বপ্নপূরণ। তবে যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট যাত্রার শুরুটা হয়েছিল, সেটা কি আদৌ পূরণ করতে পেরেছে লাল-সবুজের দল?
সারাবাংলা/এফএম