ম্যাজিস্ট্রেটদের ‘স্ট্রংলি অ্যাকটিভ’ হওয়ার তাগিদ শাহাদাতের
১১ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে যত্রতত্র যারা ময়লা ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ম্যাজিস্ট্রেটদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ডিসির (জেলা প্রশাসক) সঙ্গে সাক্ষাতে আমি ওনাকে বলেছি যেখানে খাস জায়গা আছে অন্ততপক্ষে আমাকে সেগুলো দিন। আমি সেখানে ডাম্পিং স্টেশন করতে চাই। আমি চাই না, ময়লা-আবর্জনার গন্ধ মানুষের নাকের মধ্যে ঢুকুক। শুধু গন্ধ না, পচনশীল বর্জ্য থেকে অনেক ফ্লাইস, বর্ন ও ডিজিজ হচ্ছে। সেগুলো বন্ধ করতে পরিচ্ছন্ন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াব। আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন, আপনারা রাজপথে একটু স্ট্রংলি অ্যাকটিভ হোন। যারা ইচ্ছে করে ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসের চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামকে ঘিরেই বাংলাদেশের পর্যটন খাত নির্ভরশীল উল্লেখ করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপি মূলত তিনটি খাতের ওপর নির্ভরশীল। চতুর্থ খাতকে আমরা চট্টগ্রামের মাধ্যমে উঠিয়ে আনতে পারি। সেটি পর্যটন খাত। এই খাত দিয়ে কিন্তু আমাদের আশপাশের সার্কভুক্ত সবগুলো দেশ সমৃদ্ধ হয়ে গেছে, অথচ এই পর্যটন খাতকে আমরা সেভাবে বিকশিত করতে পারিনি। চট্টগ্রামকে ঘিরেই কিন্তু বাংলাদেশের পর্যটন খাত নির্ভরশীল।’
‘আপনি যদি বাংলাদেশে কোথাও বিনোদনের জন্য ঘুরতে যেতে চান প্রথমেই চিন্তা করবেন কক্সবাজারের কথা। এরপর বান্দরবান, রাঙ্গামাটি অথবা খাগড়াছড়ি। এর বাইরেও চট্টগ্রাম এলাকায় আরও অনেক পর্যটন কেন্দ্র আছে। ফলে আমরা যদি চট্টগ্রামের পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটাতে পারি, একদিকে দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে।’
দেশের অর্থনীতির জন্যই চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রয়োজন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রামের অবকাঠামো যদি আমরা উন্নয়ন (ডেভেলপ) করতে না পারি তাহলে ইন ফ্যাক্ট আমরা বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারব না। দেশের অর্থনৈতিক যে একটা চাকা, তা সচল করার জন্য চট্টগ্রামকে সুন্দর করতে হবে।’
অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রয়োজন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আয়ের এত বড় একটি খাত। অথচ চট্টগ্রামের বাইরে কিন্তু বন্দরের টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য যেখানে ঘাটতি হচ্ছে সে জায়গায় বন্দরের টাকা চলে যাচ্ছে, যদিও বন্দর চট্টগ্রামের। কাজেই চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পটাকে চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে।’
চট্টগ্রামের বিকাশে নগর সরকার প্রয়োজন দাবি করে মেয়র বলেন, ‘সরকারকে আমরা এরই মধ্যে বুঝিয়েছি যে একটা জিনিস আমাদের খুব দরকার, সিটি গভর্নমেন্ট বা নগর সরকার। এই যে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি আপনার যারা এসেছেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে, আলোচনা করতে গিয়ে আপনারা বলছেন যে এটার-ওটার অনুমতি লাগবে বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও নেই। অথচ সিটি গভর্নমে,ন্ট থাকলে সিটি মেয়র হিসেবে আমি আজ সব জায়গায় অনুমোদনের বিষয়টি সহজে করিয়ে নিতে পারতাম।’
‘সিটি গভর্নমেন্ট না থাকায় আমাদের যেসব সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো জয় করতে হলে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতার ওপর আর কিছু নেই। আমাদের যে ঐক্য, আমাদের যে হৃদ্যতা, এর মাধ্যমে আমরা আসুন সিটি গভর্নমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত সবাই মিলেমিশে কাজ করি,’— বলেন চসিক মেয়র শাহাদাত।
শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমি সবগুলো ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বসব। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, বিশেষ করে নালা ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে ময়লার বিন রাখা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ বিন না থাকায় অনেকে ময়লাগুলো নিয়ে নালায়, রাস্তায়, খালে ফেলছে। আমি কাল নিজ হাতে নালা থেকে ময়লা তুললাম। অথচ ময়লা ফেলতে পারছি না। কারণ দোকানের সামনে বিন নেই। বিন রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ করতে হবে।’
‘রোববার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বড় কবরস্থানের পাশে কৃষিখালে গিয়ে দেখলাম, খালটি ডাস্টবিন হয়ে গেছে। পানি যাবে কীভাবে? এটা বাসাবাড়ি আশেপাশের সব মানুষ বোধহয় ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে না। এর ফেলছে খালে, মনে করে এটাই ডাস্টবিন। এভাবে তো আসলে চলতে পারে না। ওখানে ডাস্টবিন করে দিতে বলেছি,’— বলেন মেয়র শাহাদাত।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ধনাঢ্য ব্যক্তি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করুন। যোগাযোগ করে দেখি তাদের থেকে স্পন্সর পাওয়া যায় কি না। করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে উনাদের থেকে ময়লা সংগ্রহ করার জন্য বিন সংগ্রহ করা যেতে পারে। সমাজের উন্নয়নে সমাজের সবাইকে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। পলিথিনের বিকল্প অনুসন্ধান করতে হবে আমাদের। পলিথিন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ।’
বিপ্লব উদ্যানসহ চসিকের স্থাপনাগুলোর আয় যাচাই করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ‘যে জায়গাগুলো থেকে রাজস্ব আয় পাওয়ার কথা সেখানে যদি আমরা না পাই তাহলে সিটি করপোরেশন আমি চালাব কীভাবে? আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে আমি একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার করব পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে, যেখানে জনগণ কম টাকায় সেবা পাবে। সেটা তো আমি করতে পারছি না। আমার ইচ্ছা একটি চাইল্ড কেয়ার সেন্টার করব। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আরবান হেলথ সেন্টার আছে, সেগুলোকে সমৃদ্ধ করব। সেখানে ম্যাটারনাল ফ্যাসিলিটিজ, চাইল্ড ফ্যাসিলিটিজ, প্রাইমারি হেলথকেয়ার পাবে জনগণ। এগুলো তো আমি করতে পারছি না।’
মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘আমি ৭ নভেম্বর বিপ্লব উদ্যানে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, হরিলুট হয়েছে। আগের মেয়ররা একেকজন অনেক টাকা নিয়ে গেছেন বিপ্লব উদ্যান থেকে। অথচ সিটি করপোরেশন একটা টাকাও পায়নি। চুক্তি করেছে মাত্র এক লাখ টাকা দেবে, তাও বছরে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, যেটা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টাকা দিয়ে করা, সেটা বেদখল হয়ে গেছে। শপিং কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মার্কেটেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে অসম চুক্তি করে হরিলুট করা হয়েছে। আমি প্রতিটি মার্কেটের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং রাজস্ব আহরণের চেষ্টা করব।’
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও সচিব আশরাফুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/টিআর