‘ছাত্র-জনতার সঙ্গে মশকরা বন্ধ করেন, ফ্যাসিবাদের দোসর উপদেষ্টাদের সরান’
১১ নভেম্বর ২০২৪ ২২:১৬
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যুক্ত হওয়া নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে দুজনকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে অভিহিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। অবিলম্বে এই দুজনের অপসারণ দাবি করেছেন তারা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিপ্লবের চেতনা নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহিদের রক্তের অবমাননার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপণ নেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা ও নাট্যকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা প্রথম দুজনকে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্তির তীব্র সমালোচনা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা তাজা রক্ত দিয়ে অভ্যুত্থান করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই নিয়োগ দিয়েছেন। আপনারা শিক্ষার্থী, নাগরিক, শ্রমিক-জনতার সঙ্গে মশকরা বন্ধ করেন। আপনারা বিপদে পড়বেন। তারপর ছাত্রদের রাস্তায় নামতে বলবেন। এভাবে আর বেশিদিন হবে না। যারা ফ্যাসিবাদের নুন যারা খেয়েছে, আমরা কোনো ফরম্যাটেই তাদের পুনর্বাসন দেখতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, যাদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস আমরা জানতে চাই। আর যদি কোনো সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে আপনারা ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, অভ্যুত্থানের পর আমাদের মধ্য থেকে বিপ্লবী সরকারের কথা উঠে এসেছিল। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতার কথা বলে আমাদের সংবিধানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বলা হয়েছিল। গতকাল আমাদের অবহিত না করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপদেষ্টা নিয়েগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমাদের নতুন সরকার গঠন করতে বেশি সময় লাগবে না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান রক্ষা করতে আমরা রক্ত দিয়ে মাঠে থাকব।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রতি ইঙ্গিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান বলেন, যারা ফ্যাসিবাদের নুন খেয়েছে তাদের রাখার পক্ষে আমরা নই। যে লোক ২০১৩ সালে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হেফাজত ইসলামের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছে, এমনকি ৫ আগস্টের পরও ৩২ নম্বর বাড়ি সংস্কারের কথা বলেছে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে, তাদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, কথা ছিল আবু সাইদ, ওয়াসিম, মুগ্ধরা জীবন দিলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হবে। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদ বিলোপের স্টেকহোল্ডার, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আপনারা যদি মনে করেন বিপ্লবীরা ঘুমিয়ে গিয়েছে, আপনারা ভুলের মধ্যে আছেন। ফ্যাসিবাদি কাঠামো বিলোপে আমরা আবারও নামতে প্রস্তত আছি।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন কানিস ফাতেমা, রাফিদ হাসান সাফওয়ান, রিফাদ রশীদ, তরিকুল ইসলাম, হাসিব আল ইসলামসহ অন্যরা।
এদিকে একই ঘটনায় রোববার রাতে ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম উত্তরবঙ্গ থেকে একজন উপদেষ্টা না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু এক বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা! অথচ উত্তরবঙ্গে রংপুর, রাজশাহী বিভাগে ১৬ জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার ওপর খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে!’
হাসনাত আব্দুল্লাহও ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা সারাদিন লীগ তাড়াব, আর বলব মুজিববাদ মুর্দাবাদ। আর তারা মুজিবের ছবি পেছনে টাঙিয়ে শপথ পাঠ করবে!’
সারাবাংলা/এআইএন/টিআর
উপদেষ্টা পরিষদ উপদেষ্টার অপসারণ দাবি ফ্যাসিবাদের দোসর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাসনাত আব্দুল্লাহ