সূত্রাপুরকে খাসমহালমুক্ত করে খাজনা আদায়ের দাবি
১২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৮
ঢাকা: ঢাকার সূত্রাপুর মৌজার ভূমি অবমুক্তি করা ও আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অবৈধ পরিপত্রটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের পুণরায় খাজনা আদায়ের জন্য অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটি।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য দেন মজিবুর রহমান খান, সাংবাদিক মোহাম্মদ মহসীন ও রেজাউল করিম বাবুসহ অনান্যরা।
কমিটির পক্ষ থেকে মো. জুলহাস বলেন, ‘গত সরকার তাহলে এতোদিন কেন সরকার খাজনা নিয়েছে? কেন দলিল করেছে? হাজার হাজার দলিল হয়েছে? খাস জমির দলিল হয় না? তাহলে কেন দলিল করছেন। এ জন্য আমাদের সবাইকে শক্তভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। আজকে সংবাদ সম্মেলন করার পরে পরবর্তীতে আমরা এসিল্যান্ড অফিস ঘেরাও ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে মন্ত্রণলায় ঘেরাও করব। না হলে এর সমাধান হবে না।’
তিনি বলেন, খাস জমি হবে তো জমি বেচা কেনা হতো না? তাহলে কেন এই জমি বেচাকেনা হইছে? পর্চা হইছে, দলিল হইছে, খাজনা দিছি; সব হইছে;তাহলে তো আমরা বৈধ আছি। আমাদের এসএ, সিএস, আরএস ও সিটি জরিপ আছে। খাজনা আছে দলিল আছে। বাবা বসত করছে, আমরা বসত করতেছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি আমাদের অপরাধটা কি? কি কারণে আমাদের জমির বর্তমান মূল্যে ২৫ শতাংশ হিসাবে খাজনা দিতে হবে।’
পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটি সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল বলেন, ‘আমরা এর আগে ২০০৫ সাল থেকে বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগের সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ডিসির সঙ্গে দেখা করেছি এবং বিভিন্ন দফতরে চিঠিপত্র দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন দপ্তরেই আমাদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বিগত সরকার ইতোমধ্যে আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছে ২৫ শতাংশ জমির মূল্য দিয়ে নবায়ণ করার জন্য।‘
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পুরানো ঢাকার সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী, শ্যামপুর, কোতোয়ালী ও এর আশপাশ এলাকা প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এই বাসিন্দারা ভূমির খাজনা যুগযুগ ধরে পরিশোধ করে আসছে। কিন্তু ২০১১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৮ এক পরিপত্র দ্বারা পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর মৌজার খাজনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী হীনউদ্দেশ্যে ২০১১ সালে ৭০-৮০ বছর সূত্রাপুর মৌজার ৫৪৮ তৌজির লাখ লাখ মানুষ বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি ও সম্পত্তিকে অবৈধভাবে খাসমহল ও লীজের নামে নামজারি ও খাজনা নেয়া বন্ধ করে রাখে। ফলে এ এলাকার মানুষরা বাড়ি, জমি পৈত্রিক সম্পত্তি নামজারি করতে পারছে না, খাজনাও জমা নিচ্ছে না। জমি হস্তান্তর, জমি ক্রয়-বিক্রয় ও রেজিস্ট্রি করতে পারছে না। এমনকি পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা বাড়ি ঘরের ভাগাভাগি বা বণ্টননামা, হেবা রেজিস্ট্রি ও করতে পারছে না।
এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্লান পাশও হচ্ছে না। নিজ জমিতে ভবণ নির্মাণ করতে পারে না এবং ব্যাংক থেকে ঋণও নেওয়া যায় না। ফলে পুরান ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারও হচ্ছে না এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। ভূমির নামজারী না করা এবং ভূমি উন্নয়ন কর না নেওয়ার কারণে সরকার নিজেও প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১১ সালের পর হতে ডেভেলপার কোম্পানীগুলো ঋণ নিয়ে এ সকল এলাকাতে ফ্ল্যাট বাড়ী তৈরী করেছে এখন তারা ঋণের বোঝায় জর্জরিত। তারা শুধু বিপদে নয়, প্রচুরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য থাকে যে, পুরান ঢাকার ৩০ লক্ষাধিক মানুষ তাদের ভূমির খাজনা যুগ যুগ ধরে পরিশোধ করে আসছে। ২০১১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৮ এক পরিপত্র দ্বারা পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর মৌজার খাজনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা ছিল একবারে অবৈধ এবং অমানবিক।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ