ঢাকা: আগামী বছর তথা ২০২৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজন করতে পারবে না বাংলা একাডেমি। এই মেলা তাদের আয়োজন করতে হবে নিজেদের প্রাঙ্গণে।
গত বছর নেওয়া এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, তারা বিষয়টি জানতে পেরে বইমেলার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়ে প্রশাসনিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
গত ৬ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১৩ থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ওই চিঠি পাঠানো হয়। উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিন চিঠিতে সই করেছেন। তবে চিঠির কথা জানাজানি হয়েছে আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’ আয়োজন করতে হবে।
জানতে চাইলে উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিন মঙ্গলবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফাইলে যেভাবে ছিল, সেভাবে সই করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত বছরের সভায় কী আলোচনা হয়েছে না হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা নেই।’
বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, একাডেমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণেই বইমেলা আয়োজন করতে চায়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলা একাডেমি এটা নিয়ে প্রশাসনিকভাবে এগোবে।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা বাংলা একাডেমি থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আপিল বা চিঠি গণপূর্তকে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ফরিদা ইয়াসমিন।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তধারা প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির চত্বরে চাটাই বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন প্রকাশক। ১৯৭৮ সালে সে আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলা একাডেমি। ১৯৮৪ সাল থেকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে সরাসরি বাংলা একাডেমি বইমেলা পরিচালনা করতে থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বইমেলার কলেবর বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে অংশ নেওয়া প্রকাশকের সংখ্যা। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বলা যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ বইমেলার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ধারণ করতে সক্ষম হচ্ছিল না।
এ পর্যায়ে ২০১৪ সালে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল একাডেমি প্রাঙ্গণে রেখে মূল বইমেলা নিয়ে যাওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। পরের ১১ বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশেও মেলার আকার বাড়তেই থাকে। এর মধ্যে ২০২১ সালে এর নাম বদলে রাখা হয় ‘অমর একুশে বইমেলা’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজন নিয়েও প্রশ্ন ছিল। এমনকি বাণিজ্যমেলার মতো বইমেলাকেও পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়ার আলোচনা ছিল। এখন আগামী বছর বইমেলা কোথায় হবে, গণপূর্তের চিঠিতে তা নিয়ে তৈরি হলো শঙ্কা।