১৩ বছরে এসে শেষ হচ্ছে উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজ
১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১০
ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে তিনটি ব্লকে ২৪০টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণের জন্য সাড়ে চার বছর সময় দিয়ে অনুমোদন করা হয়েছিল প্রকল্প। কাজ এগোতে থাকলেও দফায় দফায় সেই প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৩ বছর পার করে সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চলেছে। শেষ মুহূর্তে এসে প্রাথমিক নকশায় না থাকা সুইমিং পুল, মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয় সমন্বয় করতে হচ্ছে প্রকল্পটিতে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অবশ্য এরই মধ্যে এই প্রকল্পের ‘এ’ ব্লকের কিছু ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে।
রাজউক ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির কাজ এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। শেষ সময়ে এসে নির্মাণ করা হচ্ছে সুইমিং পুল, মসজিদ ও মন্দির; যার কোনোটিই প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ছিল না। নতুন করে এই তিন স্থাপনার নকশা তৈরি করা হয়।
‘ঢাকার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ’ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে রাজউক। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই সময়কার গৃহায়ন সচিব মো. নবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্প অগ্রগতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে উত্তরা ১৮ নং সেক্টরে ‘এ’. ‘বি’ ও ‘সি’ তিনটি ব্লকে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৩০ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। এরপর প্রথম সংশোধনীতে মোট ১০ হাজার ৫৮৬ কোটি ২৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর একনেক সভায় প্রথম সংশোধনী অনুমোদন পায়। পরে ব্যয় না বাড়িয়েই প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে গত বছরের জুন করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, পরে ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লক ছাড়া কেবল ‘এ’ ব্লকের জন্য মোট চার হাজার ৫৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। এটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ সামনের মাসেই প্রকল্পটির বর্ধিত এই মেয়াদও শেষ হচ্ছে।
এর মধ্যেই প্রকল্পের অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে চার হাজার ২৩০ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা, বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন-১) প্রকল্পটির আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রস্তাব ডিপিইসি সভায় উপস্থাপন করেন। সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের ‘এ’ ব্লকে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স ও হেলথ ক্লাব নির্মাণের জন্য এক একর ভূমি সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স ও হেলথ ক্লাব অঙ্গে ১০ কোটি টাকার সংস্থান আছে। তবে বর্তমানে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স ও হেলথ ক্লাব নির্মাণে ১৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পটিতে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স ও হেলথ ক্লাবের সংস্থান রাখা হলে সে সময়ে বিস্তারিত কারিগরি নকশা প্রণীত হয়নি। বর্তমানে চূড়ান্ত স্থাপত্য নকশা ও কাঠামো নকশার ভিত্তিতে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স ও হেলথ ক্লাবের প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ কারণে বর্তমান রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যেখানে ব্যয় বাড়ছে ছয় কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প এলাকায় একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ ও একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। এই দুই স্থাপনায় ভিআরপি (ভ্যারিয়েবল রেফ্রিজারেন্ট প্যাকেজ) সিস্টেমের মাধ্যমে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যুক্ত করায় বাড়তি দুই কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এই দুটি খাতের বর্ধিত ব্যয় প্রকল্পের আবাসিক ভবন নির্মাণ অঙ্গে সাশ্রয় করা আট কোটি টাকা থেকে আসবে।
সভায় সভাপতি নবিরুল ইসলাম বলেন, হেলথ ক্লাবের কোনো একটি কর্নারে একটি লাইব্রেরি রাখা যেতে পারে। প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর