Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাকরাইল মসজিদ নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা সাদপন্থিদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

ঢাকা: কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তাবলীগ জামাতের একাংশের নেতা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী আগামী শুক্রবার কাকরাইল মার্কজের দায়িত্ব তাদের বুঝে পাওয়ার কথা। তবে অপর অংশ জুবায়েরপন্থিরা সম্পূর্ণরুপে কাকরাইল মসজিদ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সাদপন্থীরা।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘তাবলীগ জামাত, আসন্ন বিশ্ব ইজতিমা ও কাকরাইল মসজিদ জুবায়েরপন্থীদের দখলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবদে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

জুবায়েরপন্থীরা কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিলে সাদপন্থীরা বসে থাকবে না বলেও ঘোষণা আসে। কোন ধরণের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটলে জুবায়েরপন্থীদের তার দায় নিতে হবে। এ ছাড়া সাদপন্থীদের পক্ষে সাতটি দাবিও তুলে ধরা হয়। দুই পন্থীদের এই দ্বন্ধের অবসানও চায় সাদপন্থীরা।

‘দাওয়াত ও তাবলীগের উলামায়েকেরাম এবং সাধারণ সাথীগণের’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাবলীগ জামাতের সাদপন্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাকরাইল মার্কাজ মসজিদের (তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) মুফতি মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ প্রশাসন এবং দেশের আপামর জনগণকে স্পষ্ট করে আমরা বলতে চাই, ‘‘কাকরাইল মার্কাজ নিজামুদ্দীনের বাংলাদেশ শাখা’’ এটির ওপর সম্পূর্ণ অধিকার বিশ্ব মার্কাজ নিজামুদ্দীনের। দেশের আইন অনুযায়ী কাকরাইল মার্কাজ নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবুও যদি কেউ আমাদের সম্পদ এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বাধা দেবার চেষ্টা করে- সেটা হবে তাদের জন্য অনেক বড় ভুল। এমনটা করার চেষ্টা করলে সারাদেশ থেকে আমাদের লক্ষ লক্ষ সাথী এক ডাকেই কাকরাইল মার্কাজে উপস্থিত হবেন! সেই বাঁধভাঙ্গা স্রোত ঠেকানোর মতো শক্তি আশা করি কারো থাকবে না। আমরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের অধিকার আদায়ে ও আমাদের মার্কাজ সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে পরিচালনার জন্য যা প্রয়োজন তা করতে পিছপা হবো না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আমরা এই সুসংবাদটি দিতে চাই যে, ‘জাতীয় কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড’ আগামী ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পথ ও পন্থা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই মহাসম্মেলনে সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, মিশর, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা ও ইংল্যান্ড থেকে সম্মানিত ও বিখ্যাত উলামায়েকেরাম তাবলীগের চলমান সংকট নিরসনের রূপরেখা এবং উম্মাহের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা জাতির সামনে তুলে ধরবেন ইনশাল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দৃঢ় ভাষায় বলতে চাই, যারা তাবলীগের সংঘাতকে জিইয়ে রাখতে চাচ্ছে, তারা শুধু তাবলীগের দুশমন নয়, দেশ ও জনতার শত্রু, ইসলামের শত্রু! আপামর জনগণ খুব দ্রুত তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থীরা সাতটি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হল,

ক. দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহিংসতা এবং পারস্পরিক উচ্ছৃঙ্খল আচরণ পরিহার করে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

খ. কাকরাইল মার্কাজ সম্পূর্ণভাবে নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে।

গ. টঙ্গী ইজতিমার বৈষম্য দূর করে এই ইজতিমায় নিজামুদ্দীনের অনুসারীদেরকে প্রথম পর্বে ইজতিমা করতে দিতে হবে।

ঘ. বিশ্ব ইজতিমার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাবলীগের বিশ্ব আমির হজরত মাওলানা সা’দ সাহেবের ইজতিমায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

ঙ. দেশের সব মসজিদে তাবলীগের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা উভয়পক্ষের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

চ. উভয়পক্ষের জন্য স্থায়ীভাবে মার্কাজ পরিচালনার বন্দোবস্ত করতে হবে।

ছ. তাবলীগের ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সহিংসতাপূর্ণ প্রোগ্রামে মাদ্রাসা ছাত্রদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাবলিগ-জামাতের বিবদমান দ্বন্দ্বের পর থেকে বিগত ৭ বছর যাবত প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের ক্ষেত্রে জুবায়েরপন্থিরা ৪ সপ্তাহ ও সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যদিও বিগত সরকারের এমন বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল সাদপন্থিরা। এখন পুরো কাকরাইল মসজিদ অবৈধ দখল করে ১৫ নভেম্বর থেকে অবস্থান নিতে চায় জুবায়েরপন্থীর।

তারা বলেন, কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থিরা সারা বছর মাদরাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থি আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জুবায়েরপন্থিরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেওয়ার ঘোষণা দেওয়াকে রক্তক্ষয়ি সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া আশঙ্কা করছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধর্মীয় সংঘাত ও হতাহতের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লি ও তাবলীগের সাথীরা। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার।

আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমা ও সারা দেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থীরা জানান, জুবায়েরপন্থীরা এরইমধ্যে লাঠিসোটা সংগ্রহ করছে। সাদপন্থীদের বাধা দিতে তারা শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। এমনটি ঘটলে বড় সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ২ সপ্তাহের জন্য কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ সাদপন্থীদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে অন্তবর্তী সরকারকে। সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা জুবায়েরক উদ্দেশ্য করে লেখা একটি খোলা চিঠি পড়ে শোনান সাদপন্থী এক মাওলানা, যে চিঠি এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তাবলীগ জামাতের মুরুব্বি, বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন শায়খুল হাদীস মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতী মু’আজ বিন নূর, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও জামিয়া কাশিফুল উলুম ঢাকার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ, জাতীয় ইত্তেহাদুল উলামা ও আইম্মা পরিষদের সভাপতি পীর মুফতী শফিউল্লাহ মক্কী, মুফতি আরীফুর রহমান আলীফ, ঢাকা জেলার তাবলীগের জিম্মাদার আতাউর রহমান এবং ড. রেজাউল করিম প্রমূখ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি

তাবলীগ জামাত সাদ কান্ধলভি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর