Wednesday 13 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পঞ্চদশ সংশোধনী ছিল সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণার শামিল: অ্যাটর্নি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০২:১৭

অ্যাটর্নি জেনারেল বুধবার হাইকোর্টে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে করা রিটের শুনানিতে অংশ নেন। ছবি: সারাবাংলা

পঞ্চদশ সংশোধনী ছিল সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণার শামিল: অ্যাটর্নি

ঢাকা: বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাাতিল করাটা বাংলাদেশের মানুষের ও সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করার শামিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু আলোচিত বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিটের রুল শুনানিতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দেশে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিলোপ করায় বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই সংশোধনী ছিল মানুষের অধিকার হরণের পদক্ষেপ।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে ‘কালার‌্যাবল লেজিসলেশন’ অভিহিত করে আসাদুজ্জামান বলেন, এই সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে প্রতারণা। একটি নির্দিষ্ট দলের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা ও ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠা করতেই ত্রয়োদশ সংশোধনীকে পাস কাটিয়ে (বাইপাস করে) এই সংশোধনী আনা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসঙ্গ টেনে শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই আইন কর্মকর্তা হাইকোর্টকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এই নয় যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা, বিচার বহির্ভূত খুন করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা নয় যে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এগুলো হতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতির পিতাকে নিয়ে সংবিধানে ধারা যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি (শেখ মুজিবুর রহমান) মুক্তিযুদ্ধের সময় অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তার অবদান অনস্বীকার্য। তবে আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় আমরা (উই) বলা হয়েছে। সেখানে একক কোনো ব্যক্তির প্রাধান্য নেই, ব্যক্তিপূজার সুযোগ নেই।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করে মৌলিক বিষয়ে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। গণভোটের বিধানটি পুনর্বহালের পক্ষে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।

এ ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা বাঙালি জাতির বিষয়টির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, টেরিটোরিয়াল জুরিসডিকশন অনুযায়ী দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি পরিচয়ই একক ও অভিন্ন। আর আমাদের এখানে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষও রয়েছেন, যারা বাঙালি না। তাই সংবিধানে বাঙালি জাতি উল্লেখ থাকলে তারাও এটার মধ্যে চলে আসতে বাধ্য হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা ৭ মার্চের ভাষণ ও মুজিবনগর সরকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানের অংশ হওয়ার যোগ্য নয় উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল  প্রখ্যাত আইনজীবী মাহমুদুল ইসলামের বইয়ের রেফারেন্স তুলে ধরেন। সমাজতন্ত্র নয়, গণতন্ত্রই আমাদের সংবিধানের ‘মূল স্পিরিট’ উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি’কে পুনর্বহালের যুক্তি তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলের পঞ্চম দিনের শুনানি শেষ হয়। এ দিন অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির পর শুনানি শুরু করেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রুলের শুনানিতে সুজনের পক্ষে আছেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে আছেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে আছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইনসানিয়াত বিপ্লব দলের পক্ষে আছেন আইনজীবী আব্দুর রউফ ও ইশরাত হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী আনা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি গত আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন।

রুল শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই রুল শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পক্ষভুক্ত হয় বিএনপি ও জামায়াত। এ ছাড়া পক্ষভুক্ত হয় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনসানিয়াত বিপ্লবসহ সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

অ্যাটর্নি জেনারেল পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর