Tuesday 03 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪ উপদেষ্টার আশ্বাসে রাত ৩টায় সড়ক ছাড়লেন আহতরা, দুপুরে সচিবালয়ে বৈঠক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৩:৪৮ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১২

চার উপদেষ্টা উপস্থিত হয়ে কথা বলার পর রাত ৩টার দিকে সড়ক ছেড়ে হাসপাতালের দিকে যেতে থাকেন আহতরা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) তথা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের মূল সড়কের অবরোধ তুলে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও তাদের স্বজনরা। অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রাত ৩টার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে হাসপাতালের দিকে যেতে থাকেন।

এদিকে সড়ক ছাড়লেও দাবি-দাওয়ায় এখনো অনড় আহতরা। এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দুপুরে বৈঠক হবে সচিবালয়ে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে চার উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আসিফ নজরুল, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিটোরের সামনে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বললে শেষ পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়েন। এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন- মধ্যরাতেও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে অনড় আন্দোলনে আহতরা

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর মাহফুজ আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সচিবালয়ে আহতদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠক হবে। কীভাবে এই আহতদের পাশে সরকার থাকতে পারে, সে বিষয়ে সেখানে আলোচনা করা হবে।’

আন্দোলনে আহতদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা আছে, ভুল আছে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনেক অনেক অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি। চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু আমরা করতে পারিনি।’

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি এমদাদকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছি। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে বলেছিলেন যে সবার চিকিৎসাসহ যা কিছু দরকার, তা উনি করবেন। আমাদের অবশ্যই ঘাটতি ছিল। আপনাদের এভাবে বসে থাকা আমাদের ভালো লাগছে না। এটি আমাদের জন্যও হৃদয়বিদারক ঘটনা।’

বিজ্ঞাপন

নিটোরের সামনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে মধ্যরাতেও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে আহত ও তাদের স্বজনরা। ছবি: সারাবাংলা

বুধবার সকালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে নিয়ে নিটোর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তারা আহত সবাইকে দেখতে যাননি বলে ওঠে। এ বিষয়ে আহতের এক স্বজন কথা বলতে গেলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ আহতদের।

এর জের ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও তার সঙ্গীরা হাসপাতালেই তোপের মুখে পড়েন। পরে তারা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলে আহত ও তাদের স্বজনরা নিটোরের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

দুপুরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যায় গড়ালেও তারা অনড় থাকেন। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে কথা না বলায় তাদের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন- ‘আমাদের কষ্ট উপদেষ্টারা এসে দেখে যাক’

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহিদ ফাউন্ডেশনে’র পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সেখানে গিয়ে আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও বিক্ষোভকারীদের নমনীয় করতে পারেননি। আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টাসহ চার উপদেষ্টার উপস্থিতির দাবি জানান। পাশাপাশি রাত হতে হতে তাদের দাবি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।

মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি আন্দোলনকারীদের জানান, যে চারজন উপদেষ্টাকে নিটোরের সামনে উপস্থিত হওয়ার দাবি জানানো হয়েছে তাদের দুজন ঢাকার বাইরে, একজন বিদেশে, আরেকজন ক্যানসারের রোগী। আন্দোলনকারীরা রাজি হলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকে নিয়ে তিনি সেখানে হাজির হতে পারেন। এ ছড়া ‍বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা নাগাদ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসা যাবে বলে জানান তিনি।

মাসুম নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা জানান, তারা হাসনাতের সঙ্গে একমত। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে চার উপদেষ্টা উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করবেন বলে জানান। এরপর হাসনাত আবদুল্লাহ চলে যান।

বুধবার সন্ধ্যায় জুলাই শহিদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তার কথা শোনেননি। ছবি: সারাবাংলা

আন্দোলনকারীরা এ সময় বলেন, তিন মাস পর শুনতে হচ্ছে যে আমাদের এক ভাইয়ের হাত কেটে ফেলতে হবে। তাহলে কী চিকিৎসা এতদিন হয়েছে? আহতদের জন্য রক্ত কিনতে হয়। আমাদের বিদেশি ডাক্তারদের মূলা দেখানো হচ্ছে। এখন আমরা উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব এবং মৌখিক আশ্বাস নয়, লিখিত দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ চলে যাওয়ার পর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সেখানে উপস্থিত হন চার উপদেষ্টা। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের সুচিকিৎসার আশ্বাস দেন। আর সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানান।

এ পর্যায়ে চার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আহত আন্দোলনকারীরা সড়ক ছাড়তে শুরু করেন। তারা হাসপাতালের দিকে ফিরে যান।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

আন্দোলনে আহত উপদেষ্টা নিটোর বিক্ষোভ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর