সাড়ে ৬ বছরেও শেষ হয়নি শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল হাসপাতাল নির্মাণ
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১৭
ঢাকা: শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়নি ৬ বছর ৫ মাসেও। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। তবে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ‘শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবটি নিয়ে আগামী ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহেনা বেগম। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিইসি সভায় অনেক বিষয়েই পরিকল্পনা কমিশনের অবজারভেশন তুলে ধরা হবে। এর পর সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ দেওয়া হবে। এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সঠিক ও উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দিতে চায় সরকার। এজন্য দরিদ্র মানুষের জন্য হাতের নাগালে সাধারণ ও বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা সৃষ্টি করে গাজীপুর জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর ‘শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ গাজীপুরে বিনিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ব্যয় করে বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৪ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৮১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা মোট অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে মূল প্রকল্পের ৯২৪ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা থেকে কমে ৮৩৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার টাকা করা হয়। এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পায় ২০২৩ সালের জুন মাসে। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া আরও এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজের অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়। এ অবস্থায় নির্মাণ কাজে অর্থের ঘাটতি পূরণ ও অত্যাবশ্যকীয় কয়েকটি অঙ্গের চাহিদার পূরণে দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২০২৫ সালের জুনে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু মেডিকেল কলেজের জমি অধিগ্রহণ করা, মাষ্টার প্ল্যান তৈরি, ডিটেলড ডিজাইন চূড়ান্ত করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়েছে। এছাড়া কোভিড ১৯ মহামারির প্রার্দুভাবের কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের সব কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রথম সংশোধিত ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরবর্তীতে চলতি বছরের জুনে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়নি তাই এখন নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্পটির অনুকূলে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অব্যয়িত ৪২ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে ২০২০-২১ অর্থবছরে জমা দেওয়া সত্বেও প্রকল্পের আইবাসে এই টাকা খরচ হিসাবে দেখানো আছে। তাই নির্মাণ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ করা সব অর্থ প্রাপ্তিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই অব্যয়িত টাকা নির্মাণ কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনে প্রকল্পটি সংশোধন করা জরুরী।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
প্রকল্পটির মেয়াদকালের মধ্যে ৬ বছর ৫ মাস পার হয়েছে এবং আরও এক বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত সংশোধনের অঙ্গ বা উপঅঙ্গের (আউটসোর্সিং জনবল, মেডিকেল এন্ড সার্জিকেল যন্ত্রপাতি, চুক্তি বাস্তবায়ন (পিপিপি), স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ) ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের আওতায় কি ধরনের প্রশিক্ষণ হবে এবং কাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার সুনির্দিষ্ট রুপরেখা প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অর্ন্তভুক্ত করা হয় নি। এর যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এইচআই