মা নেই, কারাগারে বাবা— সমাজসেবাকে শিশুদের দেখভালের নির্দেশ
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০২:০৮
ঢাকা: এক মাস আগে জন্ম নেয় সাজ্জাদ মোল্লার (১৩) যমজ দুই বোন। এক সপ্তাহ পরেই তাদের মায়ের মৃত্যু হয়। এদিকে রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি হন সাজ্জাদের দিনমজুর বাবা জামাল মিয়া। এতে সদ্যোজাত দুই বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে সাজ্জাদ।
পত্রিকায় প্রকাশিত এ ঘটনা নজরে আসার পর তা আমলে নিয়ে শিশুদের দেখভাল করতে সমাজসেবা অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সমাজসেবা অধিদফতর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ আদালতের নজরে আনেন বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর)। পরে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান, সাজিয়া আফরিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। আদালতের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে বলা হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজ্জাদ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার বড় সন্তান। স্থানীয় এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামাল মিয়া পেশায় দিনমজুর। এক মাস আগে তার স্ত্রী সাথী বেগম যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসহ চার ছেলেমেয়ে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জামাল মিয়া। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালন-পালন করে দিন কাটছিল তার।
এর মধ্যে গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া বলেন, আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেই। একসময় সে আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল। পুলিশ কী কারণে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। তার সন্তানদের ঘরে খাবার নেই। কষ্টে দিন পার করছে তারা। এর মধ্যে নবজাতক দুই শিশুর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
মনির মিয়া আরও বলেন, ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ মিয়া এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া চিত্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এক মাস বয়সী দুটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। এই দুই সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় তাদের মা সাথী বেগম মারা যান। বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনাও জামালই করতেন।
এখন জামালের চার শিশুসন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই জানিয়ে মনির বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।
সারাবাংলা/কেআইএফ