আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৪০
ঢাকা: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগীদের তালিকা করে প্রত্যেককে একটি ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সেই কার্ড দেখিয়ে তারা দেশের সরকারি হাসপাতাল থেকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে সরকারের ছয় উপদেষ্টার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আহতদের ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সারাজীবন বিনামূল্যে সেবা পাবেন। এমনকি যেসব বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হবে সেখানে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন এবং চিকিৎসা ব্যয়ভার আংশিক সরকার বহন করবে। আহতদের চিকিৎসায় সব সরকারি হাসপাতালে বেড ডেডিকেটেড থাকবে। ঢাকার সব হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।’
আহতদের চিকিৎসায় রূপরেখার বিষয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত রূপরেখা দেওয়া হবে। রূপরেখায় দেওয়া টাইমলাইন অনুযায়ী সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।’
সায়েদুর রহমান জানান, ‘আজ আমরা নিশ্চিত করতে চাই এই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন এবং চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও বিভিন্ন অংশীদারদের নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমৃত্যু এই গণঅভ্যুত্থানে আহত সহযোদ্ধাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং কর্মসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি জানান, এরই মধ্যে আহতরা চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন সেগুলা যথাযথ ডকুমেন্টেশন পাওয়ার পর তাদের ফেরত দেওয়া হবে। যারা পঙ্গুত্ব এবং অন্ধত্ব বরণ করেছেন তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সমবেদনা এবং সহানুভূতি। কিন্তু আমরা সেখানে ক্ষান্ত হতে চাই না।’
সায়েদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি অন্ধ মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে তাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে তার পরিবারের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাদের জন্য যেসব মেশিন, চিকিৎসা সেবা এবং যে ধরনের যন্ত্রপাতি সহায়তা প্রয়োজন হয় তার ব্যবস্থা করা হবে।’
স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান আরও জানান, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এ আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন এবং মানসিকভাবে যে ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য তাদের সবাইকে টেলিমেডিসিন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। যাদের প্রয়োজন হবে তাদের স্ক্রিনিং করে আটটি বিভাগে সাইকো থেরাপি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য একটি সাপোর্ট সেন্টার তৈরি করা হবে। আহতদের সব অভিযোগ সেখানে আসবে এবং সেখান থেকে তার নিষ্পত্তি করা হবে। সারাদেশে সব হাসপাতলে আন্দোলনে আহতদের জন্য শয্যা থাকবে এবং আহতরা ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সহজেই জানতে পারবেন কাছের কোন হাসপাতালে শয্যা খালি আছে।’
যারা আহত হয়েছেন তাদের বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবে জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এ জন্য পঙ্গু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতালসহ ঢাকার বিশেষায়িত সবগুলো হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি হাসপাতাল, এমনকি বেসরকারি হাসপাতালে যেসব বিশেষায়িত সেবা আছে সেগুলাকে অন্তর্ভুক্ত করে আহত যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো চিকিৎসা দেশে না থাকে এবং বিজ্ঞান সম্মতভাবে চিকিৎসক বোর্ড দ্বারা সুপারিশ করা হয় তাদের বিদেশের যেখানে চিকিৎসাটা আছে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আশা করি আগামী ডিসেম্বরের ভেতর এগুলো সব দৃশ্যমান হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই, আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যাপারে গাফিলতি সহ্য করা হবে না। তাদের চিকিৎসা সেবা, সেবা প্রাপ্তি অর্থলাভসহ সকল ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে এবং কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব কথা বললাম সেগুলোর একটা রূপরেখা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের ভেতর সবার সামনে উপস্থিত করা হবে। লিখিত রূপরেখা দেখে টাইমলাইন অনুযায়ী পরে আপনারা বুঝতে পারবেন, আমরা যে অঙ্গীকার করেছি সেটা বাস্তবায়নে কাজ হচ্ছে কি না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে মিলিত হয়েছি এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য নানামুখী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করা হয়েছে। আন্দোলনে আহত অনেকেই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে আছেন। তাদের ভেতর ট্রমা এবং নানা কারণে বিভিন্ন রকম অনাস্থা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের অনেকগুলো সমস্যা আমাদের একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার এটা নিশ্চিত করতে চাই, আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এই উদ্যোগগুলো আমাদের আগে থেকেই ছিল এবং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনাগুলো দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে চাই এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো দ্রুত দৃশ্যমান একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই।’
বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সমন্বয়ক ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাসহ গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/পিটিএম