নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বাম জোট, প্রার্থী হবেন প্রগতিশীল-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৬
ঢাকা: সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া মাত্র শুরু হয়েছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি এখনো। তবে বাম গণতান্ত্রিক জোট এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। জোট নেতাদের সিদ্ধান্ত, ৩০০ আসনেই জোট থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে। আর সে জন্য জোটের বাইরেও বাম ধারার অন্য যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদের সঙ্গে শুরু হয়েছে আলোচনা।
আটটি বাম ধারার রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। দলগুলো হলো— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সামাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী দল (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি (মার্কসবাদ-লেলিনবাদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। এর মধ্যে শেষ দুটি দল জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাকি ছয়টি দল রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যেই তারা সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। বরং জোটের বাইরে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদেরও মনোনয়ন দিতে আগ্রহী তারা। জোটের নেতারা যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন।
জনজীবনে দুর্দশা লাঘবের জন্য আন্দোলনমুখী পরিবেশের মাধ্যমে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানালেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সারাবাংলাকে প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি হলে এবং সংবিধানে নতুন কিছু না হলে এখন যে পদ্ধতিতে ভোট হয় সেই পদ্ধতিতে ভোট হলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সেসব প্রার্থী দলীয়, বাম সমর্থিত, প্রগতিশীলমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
এরই মধ্যে ভোটের জন্য মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরুর তথ্য জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচার নিয়ে আমাদের নেতাকর্মী এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছে। আমি নিজে চার দিনের জন্য নীলফামারী-পঞ্চগড় ও নড়াইল-ময়মনসিংহ অঞ্চলে সফরে যাব। ওই সব এলাকায় আমাদের নির্বাচনি গণসংযোগ চলবে।’
নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের। তাদের বিশ্বাস, নির্বাচন আয়োজন হতে অনেক বেশি সময় লাগবে না। সে কারণেই অন্য বামপন্থি দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে যে ভোট এলে জোট করা যায় কি না। পাশাপাশি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্যও এই জোট মাঠে থাকবে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বামপন্থি একেকটি দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একেক রকম। তবে বিগত দিনে আমরা সম্মিলিতভাবে স্বৈরশাসক পতনের লড়াইয়ে একতাবদ্ধ ছিলাম। এখন আমাদের দাবি নিত্যপণ্যের দাম কমানো, জনজীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনা। সে লক্ষ্যে বাম দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে। বামপন্থি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিধি বাড়বে।’
বাম দলগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে স্বীকার করেও জোটের পরিধি বাড়ানোর কথা বললেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনগণ আমাদের পক্ষে আছে। তবে আমরা বামপন্থি রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে যেতে পারছি না। কারণ আমাদের নেতাকর্মীর ঘাটতি রয়েছে। কমরেডদের চেতনার অভাবও রয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির ও এর প্রভাব এ ক্ষেত্রে অনেকটা কাজ করে। তবে শিগগিরই বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিধি বাড়বে। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে আমাদের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে।’
জাতীয় নির্বাচনের কথা জানিয়ে বাসদের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি হলে বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনে অংশ নেবে। ২০১৮ সালে আমরা দল থেকে ৫৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলাম। এবারে নির্বাচনে এই সংখ্যা কিছু কমবেশি হতে পারে। সবকিছু জোটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
বাম জোটের নেতারা বলছেন, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেবল জোটের দলগুলোর ওপরই নির্ভর করবেন না তারা। জোটের শরিক দলগুলোর বাইরেও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির, প্রগতিশীল মানসিকতার ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা আগ্রহী হবেন, তাদেরও প্রার্থী করা হবে জোটের পক্ষ থেকে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
জাতীয় নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাম গণতান্ত্রিক জোট বাসদ ভোটের প্রচার ভোটের প্রস্তুতি সিপিবি