সনাতন ধর্মের মানুষদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি
১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪২
ঢাকা: হিন্দু সম্প্রদায়ের (সনাতনী) মানুষদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানায়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে চলতি বছরের গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি ঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং ইসকন সম্পর্কে উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রচারের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্যাতিত মানুষের পক্ষে বহু সংগঠন আপনাদেরকে সম্বোধন করে অভিমত ও দাবি জানিয়েছে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে মতামত তুলে ধরে দাবি জানানোর ভিন্নতা ও গুরুত্বও অনস্বীকার্য। আমরা গভীর পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি এখনও ব্যক্তিগত ও কোটারি স্বার্থে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সম্প্রদায়িক সহিংসতা ও নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার না হওয়ায় বা থামানোর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ভালোমন্দ বা দোষী-নির্দোষ নির্বিশেষে শিক্ষক ও সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে অভাবনীয়ভাবে অপমানিত, লাঞ্ছিত, পদচ্যুত ও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে যা সমাজ ও জাতীয় জীবনে নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধচর্চার দিকে যাচ্ছে। তাই আমরা এসব বিষয়ে বিবেচনার জন্য প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশব্যাপী যেসব সনাতন ধর্মালম্বী মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন অব্যাহতভাবে চলছে তার তেমন কোনো প্রতিকার না হওয়ায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর নির্যাতিতরা ক্রমাগতভাবে ভীত, সন্ত্রস্ত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যা নাগরিক জীবনকে বিপর্যপ্ত ও সৌহাদাহীন করে তুলছে। এটি দেশ ও জাতির ভাবমূর্তিকে বহির্বিশ্বে ক্ষুন্ন করছে যা কোনো কারণেই জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে না। সনাতন ধর্মালম্বীদের ওপর অতীতেও অত্যাচার, নির্যাতন করা হয়েছে। যার কোনো দিন প্রতিকার হয়নি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত নীতিমালা ও প্রতিশ্রুতির কারণে সনাতন ধর্মালম্বীদের মনে প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। সে কারণেই আমরা মনে করছি এ সরকার আমাদের দাবিদাওয়া পূরণ করবেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসা অত্যাচার-নিপীড়ন, বঞ্চনা ও সহিংসতার ব্যাপকতায় এ জনগোষ্ঠী দারুন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ (৪১টি ধর্মীয়, সামাজিক, সমাজসেবী, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত) সম্প্রদায়ের নিরাপদ অস্তিত্বের তাগিদে সামাজিক ও সম্প্রদায়গত দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধে গভীরভাবে একাত্মতা পোষণ করছি। পক্ষান্তরে, দেশ ও জাতির সামগ্রিকক স্বার্থে প্রতিও আনুগত্য পোষণ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনাকৃত সংঘ (ইসকন) সম্পর্কে বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার ও বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে ইস্কনকে সনাতন ধর্মাদর্শ থেকে আলাদা করে দেখিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্ঠা করা হচ্ছে। যারা এসব অসংযত উস্কানিগুলো দিচ্ছে তাদের ভেতরে তো প্রকৃতপক্ষে কোন রাষ্ট্র-ভাবনা নেই। তারা তাদের বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেটি না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জে কে পাল, অধ্যাপক অশোক তরু, প্রধান সমন্বয়ক শ্যামল রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়সহ অনান্যরা।
সারাবাংলা/জেজে/ইআ