জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান: দুবাইয়ে বন্দি প্রবাসীদের মুক্তির দাবি
১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৪
ঢাকা: জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে যারা প্রবাস থেকে সমর্থন দিয়েছেন তাদের একটা বড় অংশ এখনও দুবাইয়ের জেলে বন্দি। তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
তারা ওই সকল প্রবাসীদের মুক্ত করে সম্পদসহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারকে প্রবাসীদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান তারা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আইবিটিভি, নিউইয়র্ক সময় এবং কালার্স যৌথ আয়োজনে ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠক আলোচনায় রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না দুবাইয়ে প্রবাসীদের গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশে যারা আহত তাদের তালিকা করা হোক, তাদের সহযোগিতা করা হোক।
বাংলাদেশের জন্য বিদেশে লড়াইয়ের ঘটনা এই প্রথম উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারকে তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দিতে হবে এবং তারা যেন দেশে ফিরে কিছু করে খেতে পারেন সে উদ্যোগ নিতে হবে। জনশক্তি রফতানিতে সিন্ডিকেট ভাঙার তাগিদ জানিয়ে প্রবাসীদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সংস্কার প্রতিশ্রুতি কতটা গভীর সেটা দেখতে হবে। আমাদের লড়াই হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। ভোট করতে দেবে তেমন একটা পুলিশ বাহিনী এবং প্রশাসন লাগবে সহযোগিতার জন্য আর নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন হবে।
পুলিশদের সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ মনে করে চাকরি শুধু পয়সা কামানোর জন্য। তারা ডিউটি এখন ঠিক মতো করছেন না। তাদেরকে মানুষ বানাতে হবে। একটা ভোট হতে হবে। তার আগে সব বিষয়ে সংস্কার করতে পারবেন না। সেজন্য এমন একটা সরকার গঠন করতে হবে যেন তারা সংস্কার অব্যাহত রাখে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের কারণে দুবাইয়ের জেলে বন্দি ৩৫৭ প্রবাসীকে দ্রুত মুক্ত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সম্পদসহ তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগ নেবেন। আবার যারা ফিরে আসছেন তারা যেন ফিরতে পারেন সে ব্যবস্থা করতেও অনুরোধ জানান তিনি।
অন্তর্বতী সরকারকে অভিবাসন ব্যয় কমানোর তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, এবারের অভ্যুত্থানে চোখ খুলেছে তরুণদের। সেই স্থান থেকে তাদের বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রাজনীতিবিদ জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এখন পতিত সরকারের দোসররা ভারতের সহযোগীতায় সে লড়াইয়ের সফলতা নসাৎ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডোনাল্ট ট্রাম্পের ছবি নিয়ে কর্মীদের ছবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তা ভারতীয় গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচারও করছে। তারা দেশে বিদেশে জুলাই-আগস্টের প্রপাগান্ডা প্রচার করছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ও তাদের কর্মীদের চেহারা। এটা হতে দেওয়া যাবে না। এ জন্য প্রবাসীদের সহযোগীতা দরকার। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের বিচার তদন্ত হওয়া দরকার। দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। তা রক্ষা করতে হলে এমন গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে দেশের জনগণের মত প্রকাশের পথ তৈরি হয়। সে জন্য ফ্যাসিবাদিদের বিচার করতে হবে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হোসেন প্রবাসীদের ভোটাধিকারের ব্যবস্থা করার ওপরে গুরুত্ব দেন। উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো নেতা যদি ঢাকায় থেকে কোনো জেলার প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন তাহলে অন্য কোনো দেশে থেকে কেন দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না।
প্রবাসীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টি দিলে দেশ আরেকধাপ এগিয়ে যাবে। প্রবাসীরা দেশ প্রেমিক উল্লেখ করে বলেন, তাদের যে শক্তি দেখা যায় তা আর কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না।
এছাড়া, এ সময় অভিবাসন ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেন। দুবাই ফেরতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথাও বলেন।
সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, জুলাই- আগস্টে প্রবাসিদের ভূমিকা অনেক বেশি ছিল। হাসিনা সরকারের সময় রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে তারা খুব ভাল কাজ করেছে। কনক সারোয়ার, ইলিয়াস, পিনাকীরা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিল। এটাই সফলতা।
সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণে গিয়ে নানাভাবে তৎকালীন সরকারের সময়ে তাদের সমর্থকদের কাছে নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে। কথায় কথায় মানুষকে জঙ্গিবাদ, স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। জঙ্গি, জামাত শিবির ট্যাগ দিয়ে মারধর শুরু করতো। হয়রানি করতো, নাজেহাল করতো। প্রবাসীদেরকেও তারা ছাড়েনি।
তিনি বলেন, আমি বলবো এ সরকার ওই পথে না হাটুক। তারাও কাউকে আওয়ামী ট্যাগ না লাগিয়ে হেনস্থা করুক। দেশের বাইরেও দেশ বা রাষ্ট্র প্রধানকে নিয়ে বাজে শ্লোগান দেওয়া ঠিক না। এখনও যে সকল প্রবাসী দুবায়ের জেলে আছেন তাদের মুক্তির বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিতে গিয়ে দুবাইয়ে সাজাপ্রাপ্ত ফরিদ আহমেদ শাহীন বলেন, আমরা জানতাম রাজতন্ত্রের দেশে আন্দোলন করলে সাজা হয়। সেটা জেনেও দেশের স্বার্থে আমরা বিদেশে বসে এক লাখ প্রবাসী রাস্তায় নেমেছি। আমরা গ্রেফতার হয়েছি। ড. ইউনুসের একান্ত ইচ্ছায় আমরা সে সাজা থেকে মাফ পেয়ে দেশে ফিরতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমার ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ছিল কিছু নিয়ে আসতে পারিনি। এতেও দুঃখ নেই কারণ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। আবারও প্রবাসে ফিরতে চাই।
আমেরিকা প্রবাসী জাকারিয়া মাসুদ জিকো বলেন, আমরা পত্রিকায় সমালোচনা করলেও আমাদের বলা হতো স্লোডাউন করতে। আগে কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না এখন মন খুলে কথা বলতে পারছি। আমাদের মনে রাখতে হবে যাতে এই স্বাধীনতার অপব্যবহার না হয়।
দেশের বাইরে দেড় লাখ যোগ্য প্রবাসী আছে তাদের মধ্য থেকে একজনকে উপদেষ্টা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও প্রবাসী কল্যান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান।
আলোচনায় জানানো হয়, এখনও ৩৫৭ জন প্রবাসী আবুধাবির জেলে আছেন গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার কারনে। তাদের বিষয়ে নিউজ করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেন। তারা সকলের জন্য এ খাত উন্মুক্ত করে দিতে বলেন। পাশাপাশি এ খাতে সংস্কারের তাগিদ দেন তারা।
সারাবাংলা/ জেআর/এনজে