ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন: শি জিনপিং
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৭
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে বিদায়ী বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) পেরুতে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) সম্মেলনের একপাশে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে এ কথা বলেন শি জিনপিং।
শি বলেন, ‘চীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে প্রস্তুত। যাতে চীন-মার্কিন সম্পর্কের একটি মসৃণ রূপান্তর সম্ভব হয়।’
ট্রাম্পের কঠোর নীতি
যদিও শি সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি, তবে তিনি ট্রাম্পের নীতিগুলোর কারণে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কূটনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কার ইঙ্গিত দেন। শি বলেন, ‘সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বা সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করা কোনো সমাধান নয়।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বে স্থিতিশীলতা আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আরও নিশ্চিত ভূমিকা রাখা উচিত।
ট্রাম্প তার প্রচারণায় চীনের ওপর ৬০% শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন, যা প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা অনেকের মতে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা কমানোর বা রাশিয়ার কাছে কিছু এলাকা ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত।
পরমাণু অস্ত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক আলোচনা
বাইডেন এবং শি তাদের সাক্ষাতে একমত হয়েছেন যে, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত মানুষের হাতে থাকা উচিত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নয়। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তে মানব নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া, তারা সামরিক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। যদিও এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা হবে কিনা তা এখনও অনিশ্চিত। এই আলোচনা পারমাণবিক অস্ত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন অগ্রগতির সূচনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।
চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চীন-মার্কিন সম্পর্কের জন্য নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। তার মন্ত্রিসভার জন্য মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিও (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এবং রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইক ওয়াল্টজ (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা), যারা চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষে।
শি চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘নতুন যুগে আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তবে এপেক সম্মেলনে তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব এখন অস্থিরতা ও রূপান্তরের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।’
সাম্প্রতিক উত্তেজনা
এফবিআইয়ের এক তদন্তে জানা গেছে, চীনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম নেটওয়ার্ক হ্যাক করার চেষ্টা করেছে। এতে মার্কিন কর্মী ও রাজনীতিবিদদের তথ্য চুরির চেষ্টা চালানো হয়। ট্রাম্প, তার রানিংমেট জেডি ভ্যান্স এবং কমলা হ্যারিসের স্টাফদের ফোনও এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।
চীন-মার্কিন সম্পর্ক কীভাবে এগোবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে উভয় দেশের নীতিতে পরিবর্তন বিশ্ব রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সারাবাংলা/এনজে