ধৈর্য ধারণ করায় সবাইকে ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩০
ঢাকা: জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে সৃষ্ট অনিশ্চিত এক পরিবেশে ধৈর্য ধারণ করে সরকারের পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সবার সহযোগিতাতেই সরকার পরিস্থিতি দৃঢ়ভাবে সামাল দিতে পেরেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে এ ভাষণ দিচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, কঠিন এই সময়ে আপনারা সবাই অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের, তারা তাদের কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, প্রতিশোধস্পৃহায় লিপ্ত হয়ে কেউ যেন হানাহানিতে জড়িয়ে না পড়ে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। আপনাদের সবাই এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি ভয় দেখিয়েছিল, তারা ক্ষমতা ছাড়লে দেশে লাখ লাখ লোক মারা পড়বে। টানা সাত দিন পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল। তা সত্ত্বেও ব্যাপক আকারে সহিংসতা এড়ানো গেছে।’
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, বাংলাদেশ তখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত একটা দেশ। এ সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তারা সহিংসতারও শিকার হয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়ে যেসব প্রচার-প্রচারণা হয়েছে, তা ছিল সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত। অল্প যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা দৃঢ়ভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা পালনের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের দু’মাসের মাথায় দেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার পূজা মণ্ডপে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্বাহী আদেশে একদিন অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা উৎসবের আমেজকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। দূর্গাপুজাকে ঘিরে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেই। ফলে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করেছে। আমরা দায়িত্বে আসার পর যে অল্প কিছু ক্ষেত্রে তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন, আমরা তার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, দেশের কোনো মানুষই যেন কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার না হয়, সেজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এবং সবসময় সে চেষ্টা করে যেতে থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। বাধ্য হয়ে তাদের অনেকেই গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন। খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। এতে তাদের মনোবল অনেক কমে যায়। আমরা পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে তাদের আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে অনেক দৃশ্যমান উন্নতিও হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতিতে সহায়তা করেছে।’
ভাষণে সরকারের ১০০ দিনের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের গুম-খুনের বিচারের প্রত্যয় জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক বিভিন্ন তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন।
সারাবাংলা/টিআর/পিটিএম