‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, আর থামবে না’
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৭
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে কৌতূহল সারা দেশের মানুষের। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরকার সেই নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু করেছে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কারকাজ চালিয়ে নিতেও সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমত্যের মাধ্যমে।’
রোববার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারে ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে তিনি এ ভাষণ দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আরও পড়ুন- ‘শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব’
জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার কাজের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেন, ‘দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথাও ভাবতে হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিটি মতামত সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসব। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করব।’
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে— এই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সব দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।’
সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনই করতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ আরও কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে, যা একটি অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দল ও দেশের সব মানুষের মতামত অপরিহার্য, সে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনি আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।’
‘আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাব। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করব। ততদিন পর্যন্ত আমি আপনাদের ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করব। আমরা চাইব, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা তৈরি করতে পারি যা যুগযুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সাংবাৎসরিক রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন,’— বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ভাষণে সরকারের ১০০ দিনের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের গুম-খুনের বিচারের প্রত্যয় জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক বিভিন্ন তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন-
- ধৈর্য ধারণ করায় সবাইকে ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার
- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কী করছে— জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
- ‘গুম-খুন-গণহত্যায় জড়িতদের বিচার হবে আন্তর্জাতিক আদালতেও’
- ‘অভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন সরকারের অঙ্গীকার’
- মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্টে শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শুরু
সারাবাংলা/টিআর/পিটিএম