‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় হতাশ হয়েছি’
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০৪
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেস্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় হতাশ হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হতাশার কথা জানান।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে বিএনপি গঠিত ‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটি’।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল রোববার আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সাহেব ১০০ দিন পূর্তির একটা বক্তব্য রেখেছেন। ভালো হয়েছে। অনেকেই আশান্বিত হয়েছে। আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের একটা রূপরেখা দেবেন।’
‘আমি কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। কারণ, নির্বাচন দিলে আমার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক, দ্যাট’স ইম্ম্যাটেরিয়াল! কিন্তু আজকে যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, যারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশকে যারা সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, ওই সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। এই বিষয়টা অবশ্যই চিন্তা করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সংস্কার আমরা চাই না শুধু, সংস্কার আমরা শুরু করেছি। সংস্কার আমরা অবশ্যই চাই, এবং সংস্কার আমরা করব। আপনারা দয়া করে জিনিসটাকে যেভাবে করলে সবচেয়ে সুন্দর হয়, সবার কাছে গ্রহণযাগ্য হয়, সেভাবে এগিয়ে যান। এটাই আপনাদের কাছে অনুরোধ। আমরা এখন পর্যন্ত আপনাদের কোনো কাজে বাধার সৃষ্টি করিনি। সমর্থন দিয়ে চলেছি। প্রতিটা কাজে সমর্থন দিচ্ছি। যদিও আপনাদের এই সচিবালয়ে এখনো স্বৈরাচারের সমস্ত দোসরেরা, ফ্যাসিবাদের দোসরেরা বসে আছে।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি কাদেরকে নিয়ে সংস্কার করবেন? এরা তো সংস্কার করতে দেবে না আপনাকে। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তো বসে আছে সচিবালয়ে, যারা স্বৈরাচারের দোসর, যারা কোটি কোটি টাকা আয় করছে, দুর্নীতি করেছে, তারাই তো বসে আছে। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি না, তাদের বিরুদ্ধে সেইভাবে ব্যবস্থা হচ্ছে। এটাকে একটু দৃশ্যমান করেন।’
গুড গভর্নেন্সের দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গভর্নেন্সের দিকে একটু নজর দিতে হবে। আপনাদের প্রশাসন চালানো, দেশ শাসন করা দেখে জনগণ যেন শান্তি পায়।
জিনিস-পত্রের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নাই। তারপরও তো মানুষ মেনে নিচ্ছে। মেনে নিচ্ছে এই জন্য যে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সুন্দর জিনিস দেবেন। তাহলে ওটাকেও দৃশ্যমান করেন যে, আপনি ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিন্ডিকেটগুলোকে ভাঙার চেষ্টা করেন। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে তো। আর গভর্নেন্সের ব্যবস্থা করেন।’
‘লোকজন যদি স্বস্তিতে না থাকে, কাজ করতে গেলে যদি টাকা দিতে হয়, ঘুষ দিতে হয়, আর সচিবালয়ে কেউ কাজে গিয়ে যদি দেখে আবার সেই দালালেরা ঘোরাঘুরি করছে, তাহলে কেউ-ই বিষয়টা ভালো চোখে দেখবে না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই সরকার পারবে, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশর মানুষ পারবে। আমরা বিশ্বাস করি এই তরুণেরা, ছাত্ররা, তারা সবাই মিলে একটা নতুন বাংলাদেশ দিতে পারবে। যে পথ মাওলানা ভাসানী আমাদের দেখিয়েছেন, জিয়াউর রহমান আমাদের দেখিয়েছেন, তারেক রহমান আমাদের দেখাচ্ছেন। সে পথেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
ছাত্রদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটা পরিবর্তন এসছে। এই পরিবর্তনটাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে ছেলেরা কী বলছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে… ছেলেরা সব আন্দোলন একাই করেছে, এটা তারা মানতে রাজি না। অনেকেই এ কথাটা খুব জোরে শোরে মিটিংয়ের মধ্যেও বলেন। সত্য কথা, আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেলে গেছি। তারপর শেষ লাথিটা বলে কে মেরেছে? ছাত্ররা মেরেছে। দে আর স্ট্রাইকার। তারা স্ট্রাইক করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্ররা অনেক কথা বলেছে, বলবে, তাদের সেই বলার অধিকারও আছে। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। আমরা বড় হিসেবি। হিসাব করি যে, কোনটা করা যাবে, কোনটা করা যাবে না। কোনটা এখন করা ঠিক হবে, কোনটা এখন করা ঠিক হবে না। সেই কারণেই আমরা বলছি যে, দ্রুত নির্বাচন এই দেশের জন্য, জাতির জন্য মঙ্গল। কেন বলছি? আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এই ধরনের সরকার যত দিন বেশি থাকে, ততদিন সমস্যা থেকে যাবে। কেন? এর তো ম্যানডেট নাই, এটা নির্বাচিত সরকার নয়। এর পেছনের শক্তিটা কোথায়? এই জন্য এই সরকারকে ওটা চিন্তা করতে হবে যে, যত দ্রুত সময়ে পারি নির্বাচনটা দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।’
মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব শামসুজ্জামান দুদুর সভাতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের নেতা হেলেন জেরিন খানসহ অনান্যরা।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ