ভারতের মণিপুরে জাতিগত সংঘাত, ৬টি মৃতদেহ উদ্ধার
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৫
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ছয়জন নারী ও শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্য বলে গণমাধ্যমের তথ্যসূত্রে জানা গেছে।
মেইতেই গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করেছে, তাদের অপহরণ করেছে সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের সদস্যরা। তবে পুলিশ এ বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য দেয়নি।
এ ঘটনায় সপ্তাহান্তে রাজ্যে সহিংস প্রতিবাদের নতুন ধারা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের মে মাস থেকে মেইতেই ও কুকি গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান জাতিগত সংঘাতে এ পর্যন্ত ২০০ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিক্ষোভকারীরা রাজ্যের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর অন্তত ১২ বিধায়কের বাড়ি এবং অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। মেইতেই-অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকা এবং বিষ্ণুপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। রবিবার (১৭ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেন। তবুও রাজ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
চলতি নভেম্বর মাসে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতে অন্তত ২০ জন মেইতেই ও কুকি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
এই জাতিগত উত্তেজনা শুরু হয় ৭ নভেম্বর, যখন একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা কুকি সম্প্রদায়ের একজন নারীকে ধর্ষণ করে এবং পরে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটেছিল জিরিবাম জেলায়।
ঘটনার চার দিন পর, মেইতেই শরণার্থীদের জন্য স্থাপিত একটি ত্রাণ শিবির ও স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় কুকি সম্প্রদায়কে এ হামলার জন্য দায়ী করে।
সেই দিনই পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ১০ জন সন্দেহভাজন সশস্ত্র ব্যক্তি নিহত হয়। পুলিশ জানায়, তারা কুকি জঙ্গি ছিল, তবে কুকি সংগঠনগুলো দাবি করে তারা গ্রাম রক্ষী ছিল যারা সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা প্রদানের কাজ করছিলো।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) পুলিশ ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করে। যদিও মৃতদেহগুলোর পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদেরই মৃতদেহ।
এই ঘটনায় বিক্ষোভকারীরা এবং সিভিল সোসাইটি গ্রুপগুলো দাবি জানিয়েছে, সহিংসতা বন্ধ করতে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।
উল্লেখ্য, ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুটি প্রধান জাতিগোষ্ঠী হল মেইতেই ও কুকি। মেইতেইদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। অন্যদিকে, কুকিদের বেশিরভাগই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। সমতলভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের অন্যতম কারণ।
গত বছরের মে মাসে মেইতেই সম্প্রদায়ের জন্য সরকারিভাবে উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার দাবির বিরুদ্ধে কুকিদের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে এই সংঘাত শুরু হয়। ওই মর্যাদা পেলে মেইতেইরা সংরক্ষণ সুবিধা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করতে পারতো। তখন থেকেই মণিপুর দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা এবং অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে মণিপুর কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। ইম্ফল উপত্যকায় মেইতেইরা বসবাস করে, আর পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলোতে কুকিরা বসবাস করে। নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত সীমানা এবং বাফার জোন এই দুটি অঞ্চলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে।
সারাবাংলা/এনজে
কুকি সম্প্রদায় নিহত ভারত মণিপুর রাজ্য মেইতেই সম্প্রদায় সংঘাত