‘শেখ হাসিনা নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন’
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫০
ঢাকা: ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নিজেকে এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করলেও বাস্তবতা ভিন্ন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের ফাঁকে আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি এবং সেখান থেকে তিনি যে বিবৃতি ও ঘোষণা দিচ্ছেন তা ইউনূস প্রশাসন কীভাবে দেখছে? আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্কের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি বিবৃতি দিচ্ছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন- দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলায় আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। এটা বাংলাদেশের জন্য মোটেও সহায়ক হবে না। সুতরাং আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে আপনি তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, ভালো। তবে দয়া করে নিশ্চিত করুন যে- তিনি আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করবেন না। না হলে আমাদের আবার আপনাদের (ভারত) কাছেই অভিযোগ করতে হবে যে আপনি এমন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন, যা আমাদের জন্য খারাপ। সুতরাং আমাদের উচিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে, বন্ধুত্বপূর্ণভাবে এর সমাধান করা।’
নিক ক্লার্ক বলেন, শেখ হাসিনা এখনও নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখছেন— তখন প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি নিজেকে অনেক কিছুই বলতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও বলছে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী; সুতরাং তাকে আশ্রয় দিলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কিছুই বলছে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটার আইনগত প্রক্রিয়া চলছে এবং অভিযুক্ত হলে অবশ্যই তাকে প্রত্যর্পণের জন্য বলা হবে।’
নিক ক্লার্ক বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংখ্যালঘুর অধিকার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউনূস কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করছেন? এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সংখ্যালঘুদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, দেখুন, আপনি দেশের নাগরিক। সংবিধান আপনাকে আপনার অধিকার, স্বাধীনতা, নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার, আপনার নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। এগুলো সংবিধানেই আছে। সুতরাং এটি আপনার (বাইরের দেশ) দিক থেকে আসা কিছু নয়। নাগরিকরা সংবিধানের দেওয়া অধিকার যাতে ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করাই সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।’
কিন্তু শোনা যাচ্ছে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বেড়েছে? উত্তরে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, ‘সহিংসতা বাড়েনি। আমি বলব সহিংসতা কমেছে। বিপ্লবের সময় থেকেই সহিংসতা শুরু হয়। এই কারণে নয় যে তারা হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী, তাদের বেশিরভাগই ছিল আওয়ামী লীগার।’
নির্বাচন আয়োজন করতে প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল; সেই মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে আলোচনা চলছে। বাস্তবতা কী?
জবাবে ইউনূস বলেন, ‘না, কেউ এটাকে সংক্ষিপ্ত সময় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে— এমনটা কখনো হয়নি। রাষ্ট্র সংস্কারকেই মূল দাবি বলা হচ্ছিল, কারণ ছাত্র আন্দোলনই হয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। তাদের শব্দটা ‘নতুন বাংলাদেশ’। কেবল নির্বাচন করেই ‘নতুন বাংলাদেশ’ আসবে না। নির্বাচন আয়োজনের মানে রাজনীতির মাঠে পুরনো পদ্ধতির কেবলই পুনরাবৃত্তি। আমরা এসব থেকে পরিত্রাণ চাই। গোটা দেশের মানুষ এটাই চেয়েছিল নতুন কিছু, পুরাতনের চেয়ে ভিন্ন কিছু। মানে অনেক কিছু।’
তিনি বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থার সংস্কার দরকার, কারণ দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার বিভাগকে বিগত সরকার কব্জায় রেখেছিল। এর জন্য পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সংবিধানের সংস্কার। আইনের মৌলিক বিষয়গুলো সংবিধানে আছে। তাহলে সংবিধান নতুন করে সাজবে কীভাবে? সে লক্ষ্যেই আমরা কমিশন গঠন করেছি।”
জনগণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নির্বাচন চায়- বিষয়টা কি তেমন নয়? সংস্কার তো সরকারের ওপর নির্ভর করে— অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘না, এটা আমাদের উপর নির্ভর করে না। এটা তাদের (জনগণের) ব্যাপার। আমরা সব সময় বলি, আমরা আপনার সঙ্গে পরামর্শ করছি। আমরা কোনো কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না। আপনারা যদি বলেন- এগিয়ে যান, নির্বাচন করুন, সংস্কারের কথা ভুলে যান, আমরা নির্বাচনই করব। সব রাজনৈতিক দল একমত হলেই হয়ে যাবে। আমরা সংস্কার করছি, তারপর নির্বাচনের আয়োজন করব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের প্রশ্নে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চিরস্থায়ী সরকার নই। উদাহরণস্বরূপ একটি নিয়মিত সরকারের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছরের জন্য। নতুন সংবিধানে চার বছর বলা হতে পারে, সম্ভবত, কারণ মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে…।
আলজাজিরার প্রশ্ন— তাহলে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার চার বছর থাকছে কি না?
জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি এটা বলিনি যে আমি চার বছর থাকব। আমি বলছি ওইটা সর্বোচ্চ সময় হতে পারে। কিন্তু সেটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি সম্পন্ন করা।’
এছাড়া, অধ্যাপক ইউনূসের নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগ্রহ আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন, ‘না, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি যা করছি তা উপভোগ করছি। আমার জীবন শেষ পর্যায়ে, এখন আমার (ভূমিকা) পরিবর্তন করতে চাচ্ছি না।’
সারাবাংলা/ইআ