দিল্লিতে বছরের সর্বোচ্চ দূষণ: নাগরিক জীবনে বিপর্যয়
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৯
দিল্লিতে শীতের সময় প্রতিবারের মতো এবারও ধোঁয়াশার কারণে বায়ুর গুণমান গুরুতরভাবে খারাপ হয়েছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে শহরের বায়ুর গুণমান সূচক (একিউআই) ৪৮৪-এ পৌঁছেছে, যা ‘গুরুতর পর্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত।
সুইস সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। শহরের বায়ুতে পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ (পিএম ২.৫) দূষণকারী উপাদানের উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত মাত্রার ১৩০.৯ গুণ বেশি। এই দূষণকারী মাইক্রোপার্টিকল ফুসফুসে প্রবেশ করে মারাত্মক রোগ ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
দূষণের প্রধান কারণ
শীতকালে ঠান্ডা বাতাস ধুলো, গাড়ির ধোঁয়া এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে অবৈধভাবে পোড়ানো ফসলের খড়ের ধোঁয়াকে আটকে রেখে ধোঁয়াশার একটি পরিবেশ তৈরি করেছে। দিল্লি এবং চণ্ডীগড়ে শহরের দৃশ্যমানতা মাত্র ১০০ মিটারে নেমে এসেছে। যদিও ফ্লাইট ও ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে, তবে পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি।
প্রতিবেশী পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানে খড় পোড়ানো দিল্লির বায়ু দূষণের ৪০% কারণ। ভারতের একটি কনসোর্টিয়াম রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রবিবার (১৭ নভেম্বর) তীব্র মাত্রার দূষণের ১ হাজার ৩৩৪টি ঘটনা স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে।
জরুরি সরকারি পদক্ষেপ
বাড়তে থাকা তীব্র বায়ু দূষণের কারণে দিল্লি সরকার এবং কেন্দ্রীয় পরিবেশ কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে:
দিল্লির সব স্কুল অনলাইনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তবে ১০ম ও ১২শ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ম কিছুটা ব্যতিক্রম।
বিএস-থ্রি পেট্রোল (BS-III) ও বিএস ফোর ডিজেল (BS-IV) চালিত যানবাহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সমস্ত নির্মাণ এবং ধ্বংসকাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ধূলিকণা কমাতে প্রধান সড়কগুলোতে নিয়মিত জল ছিটানো হচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে ৫০% কর্মী উপস্থিতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বাকিদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নাগরিক জীবনে প্রভাব
দূষণের কারণে প্রায় সবাই শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, এবং ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। দিল্লির বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিনের কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক স্থাপনা, যেমন ইন্ডিয়া গেট, ঘন ধোঁয়াশার কারণে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এক বাসিন্দা বলেন, ‘সকালের হাঁটতে বের হলে যে সতেজতা অনুভূত হতো, এখন তা দূষণের কারণে বিপরীত হয়ে উঠেছে। আমাদের মাস্ক পরতে বাধ্য হতে হচ্ছে।’
বায়ুমান পরিস্থিতি
দিল্লি এবং এনসিআরে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চার স্তরীয় পরিকল্পনা রয়েছে কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএকিউএম)-এর। একে বলে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (জিআরএপি-গ্র্যাপ)। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে এই সিএকিউএম। দিল্লিতে একিইউআই খারাপ হলে গ্র্যাপ-১ চালু করা হয়। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতে গ্র্যাপ-৩ চালু করা হয়েছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে দোষারোপের পালা চলছে। বিজেপি দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে দূষণের জন্য দায়ী করেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নাগরিকদের বাড়ির বাইরে কম বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং মাস্ক পরা ও এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এনজে