চরমোনাই পীর
রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করুন
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৯
খুলনা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রসংস্কার করা; যাতে করে আর কখনোই কোনো স্বৈরাচার জন্ম নিতে না পারে। এসময় তিনি রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুর ২ টায় নগরীর ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্ত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনগুলোকে গতিশীল ও জনসম্পৃক্ত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করুন। উলামা শ্রেণি এবং বিভিন্ন পেশা ও স্তরের জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যেই মানুষের মধ্যে কানাঘুষা তৈরি হয়েছে। এই কানাঘুষা সংস্কারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, বন্ধ থাকা সকল মিল-কলকারখানা চালু, সংখ্যানুপাতিক (পি আর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইসলামী সমাজ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণসমাবেশ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিগত একশ দিনের বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে বিগত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী হওয়া ও জনমানুষের বোধ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিপ্লবের তেমন কোন অবদান না থাকা সত্বেও বড় পদে পদায়িত করার অভিযোগ আছে। এগুলো মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে।
উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে জনগণ মেনে নেয়নি উল্লেখ করে বলেন, পতিত স্বৈরাচারের বেনিফিশিয়ারী বিকৃত মানসিকতার সমাজ বিধ্বংসী নাটক-সিনেমা নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, সাধারণ মানুষ জটিল রাজনীতি বোঝে না। তারা তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা চায়, জীবনের নিরাপত্তা চায়। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই জনতার অভিজ্ঞতা ভালো না। দ্রব্যমূল্য বহু আগেই নাগালের বাইরে চলে গেছে। সংসার চালাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। স্বৈরাচারের পতনের পরে মানুষ ভালো কিছু আশা করেছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। এসময় তিনি খুলনার বন্ধকৃত সকল মিল-কলকারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও খুলনা মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ও নগর সহ সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, নগর সেক্রেটারি মুফতী ইমরান হুসাইন, জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালীরে সঞ্চলনায় গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হুসাইন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব মো. আমিনুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মানসুর আহমেদ সাকী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল বশর আজিজী।
গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির আলোচনায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাও. ইউনুস আহমাদ বলেন, পতিত হাসিনা সরকার জাতির সাথে যা করেছে তার বিচার না হলে মানবতার সাথে অপরাধ করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।’
যুগ্ন মহাসচিব মাও. গাজী আতাউর রহমান বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে জনতার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনতার আকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। কোনে বিশেষ মহল কিংবা কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী যেন আপনাদের দ্বারা বিশেষ কোনো সুবিধা না পায় সেদিকে সতর্ক ও সজাগ থাকুন।
সমাবেশে দাকোপ ও ডুমুরিয়া থেকে ৫০ জন হিন্দু পীর সাহেব চরমোনাইয়ের হাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করেন।
সারাবাংলা/এসআর