শিক্ষকদের দলাদলি করতে নিষেধ করলেন চসিক মেয়র
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দলাদলি করতে নিষেধ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় কার্যক্রম করলে বরদাস্ত করবেন না জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘শিক্ষকরা সভায় দলাদলির যে অভিযোগটি করেছেন তা হতাশাজনক। একাডেমিক কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের দলাদলি করা উচিত নয়। যে কারও অন্য কোন মতাদর্শে বিশ্বাস থাকতে পারে। কিন্তু সেটা অফিস টাইম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে চর্চা করা উচিত। আমি নিজে একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি এবং দল করি। কিন্তু আমি মনে করি, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে। আর যখন আমি একটা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবো সেখানে রাজনীতি টেনে আনব না।’
‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কোনও অন্যায় করব না। এজন্য চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের আমি আসতে বারণ করি। অথচ আমিই সন্ধ্যা হলে দলীয় কার্যক্রমে যাই। ঠিক একইভাবে এখানে যারা এসব দলবাজি করবে তাদেরকে আমি বরদাস্ত করব না।’
ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের লিস্ট চেয়ে মেয়র বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাতে ঠিকমতো পড়াশোনা করে, ক্লাসে আসে, ক্লাস যাতে ফাঁকি না দেয় এবং সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যে টাইমিং আছে সেটাতে যাতে সবাই একাডেমিক কার্যক্রমে থাকে তা নিশ্চিতে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোন শিক্ষক বাড়ির পাশে পোস্টিং থাকায় ক্লাসের ফাঁকে বাসায় চলে গেল এগুলো যাতে না হয়।’
‘প্রধান শিক্ষককে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও প্রেসার দিয়ে চলে গেলে এ ধরনের কোন উদাহরণ এবং ফাঁকিবাজ কোন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের উপর হুমকি দেয় কিংবা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয় প্লিজ লিস্ট দেবেন। সে যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন শাস্তি হবে।’
চসিকের শিক্ষা বিভাগে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘অতীতে অনেক কিছু হয়েছে। অনেকের সিগনেচারে শ্রমিকও শিক্ষক হয়ে গেছে। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এটা আর হবে না। অনেকে ঘুরাঘুরি করেছিল আমার সাথে দেখা করতে আমি তাদেরকে মানা করে দিয়েছি। সামনে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করব এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করব। শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির জন্যও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে আন্দোলনের মাধ্যমে আজ একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল কনসেপ্টটা ছিল মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ। ওই আদর্শকে সমুন্নত রেখে আমরা যদি চলি তাহলে আমরা সমস্ত দলাদলি ভুলে গিয়ে দেশ গঠনের কাজে ছাত্রদেরকে সে শিক্ষাই দেব যাতে তারা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।’
মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘ছাত্রদের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। আমরা দেখেছি তারা রাস্তাঘাটে ট্রাফিক বিভাগের কাজ করেছে। তারা তো আন্দোলন করেছেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করেছে। কাজেই আমরা তাদেরকে দিয়ে অনেক ভাল কাজ করাতে পারি। বাবার পরে যদি কোন ছাত্র কাউকে মান্য করে সেটা হচ্ছে শিক্ষক। আমরা যখন দেখি যে একজন শিক্ষককে ছাত্র অপমান করছে তা ভালো লাগে না।’
‘যখন আবার এ জিনিসগুলোর খুব ডিটেইলসে যাই যে কেন একটা ছাত্র একটা শিক্ষকের অপমান করবে, কেন এ ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলবে? ওই ঢুকতে ঢুকতে লাস্টে দেখা যাচ্ছে চরম অসঙ্গতি। হয়তোবা সেখানে অনেক দুর্নীতির ব্যাপার চলে আসছে। হয়তোবা কারো সাথে অসদাচরণ বা এমন এমন কিছু কথাবার্তা চলে আসে যেগুলো আমি এখানে বলতে চাচ্ছিনা। কাজেই এ বিষয়গুলোতে আমাদের শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে হবে।’
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব আশরাফুল আমিন, শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/এসআর
সারাবাংলা/আইসি/এসআর