‘অনুকূল পরিবেশে’ পুরোদমে নির্বাচনি প্রস্তুতিতে বিএনপি
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২২:২৪
ঢাকা: ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি, ২০১৪ সালে বর্জন, ২০১৮ সালে নির্বাচনে ‘প্রতিকূল পরিবেশ’, ২০২৪ সালে এসে ফের বর্জন— এভাবে চারটি জাতীয় নির্বাচন ‘হাতছাড়া’ হয়েছে বিএনপির। এবার ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে ‘অনুকূল পরিবেশ’ পেয়েছে দলটি। তার সুবিধা নিয়ে বিএনপি পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কেন্দ্রের নির্দেশে সারা দেশে নির্বাচনি এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এরই মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা দলীয় নেতাদের পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সহায়তার জন্য তৃণমূল নেতাদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই চিঠি পাওয়ার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগদান এবং নিজ নিজ এলাকায় দলের প্রতিটি ইউনিটকে পুনর্গঠনে উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনের জন্য দল ও নিজের অবস্থান সুসংহত করতে সব ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনমুখী দল হিসেবে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি সবসময়ই বিএনপির থাকে এবং সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এই মুহূর্তের প্রস্তুতি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিতে প্রাধান্য পাবেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় প্রার্থী, বিশেষ করে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল থেকে উঠে আসা তরুণ নেতারা। এ ছাড়া দলের সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তারা নির্বাচনের জন্য দলের বিবেচনায় রয়েছেন। আর কপাল পুড়তে পারে সেইসব নেতার, বিগত দিনে যারা গা বাঁচিয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি সবসময় নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য, সক্রিয়, ত্যাগী ও অনুগত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেয়। আগামী নির্বাচনেও নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে তিন শ আসনে যোগ্য প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে বলার মতো কিছু হয়নি। এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও জনসংযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দলের শীর্ষ নেতারা পর্যায়ক্রমে তৃণমূল সফর করবেন। জেলায় জেলায় কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন নির্বাচন সংক্রান্ত দলীয় বার্তা। এসব অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঝিনাইদহ, যশোর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ ও গুরুত্বপূর্ণ জেলায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমান। এসব সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি লালমনিরহাট ও নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও সফর করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সফরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ঘরোয়া বৈঠকে দলের তৃণমূল নেতাদের পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ মুখিয়ে আছে। জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি চায় জনগণকে দ্রুত সেই সুযোগ দিতে। এর জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, সে ব্যাপারে দলের সব পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনে বিএনপি জিতলে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পটপরিবর্তনের পর সে ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রাথমিক উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। ২২ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠি তৃণমূলে পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪, রামগতি-কমলনগর), নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪, শিবগঞ্জ), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩, গলাচিপা-দশমিনা) ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২, সদর ও হরিণাকুণ্ডু) এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদাকে (কিশোরগঞ্জ-৫, নিকলী-বাজিতপুর) নির্বাচনি এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালায় সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ চিঠিকে অবশ্য নির্বাচনের আসন বণ্টন হিসেবে দেখছেন না বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা। তারা বলছেন, স্রেফ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতা করার জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই চিঠির সঙ্গে আসন বণ্টনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে গত বছর আমরা যারা নির্বাচন করেছিলাম, তারা নিজে থেকেই নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছি। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত সবার জন্যই আছে।’
জানা গেছে, অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় রেখে বিএনপির কার্যক্রম সামনের দিকে এগুচ্ছে। যেহেতু পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে জিতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পরিচালনা করা হবে, তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে সবাইকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ঢাকা বসে না থেকে দল ও সমমনা জোটের শীর্ষ নেতাদের তাই তৃণমূল সফরে পাঠানো হচ্ছে নিয়মিত।
এ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার নির্বাচনি এলাকায় বড় দুটি প্রোগ্রাম করেছি। ওই প্রোগ্রামগুলো বিএনপির নেতাকর্মীরাই সফল করেছেন। কেন্দ্রের সবুজ সংকেত না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। এসব প্রোগ্রাম নির্বাচন সামনে রেখেই আয়োজন করা হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
জাতীয় নির্বাচন জাতীয় সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনি প্রচার বিএনপি