রেলওয়ের ডিজি নিয়োগ
বাইরে থেকে আনার গুঞ্জন, ভেতর থেকেই চান কর্মকর্তারা
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৮
ঢাকা: বাংলাদেশ রেলওয়েতে মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে রেলওয়ের বাইরে থেকে কোনো কর্মকর্তাকে এবার দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি মহাপরিচালকের দায়িত্ব। আর এ নিয়েই গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়ে এরই মধ্যে রেলপথ উপদেষ্টা বরাবর একটি স্বারকলিপিও দেওয়া হয়েছে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফকির মো. মহিউদ্দীন এবং বিসিএস রেলওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড কমার্শিয়াল অফিসার্স’র সভাপতি মো. নাজমুল ইসলামের সই করা স্মারকলিপিতে রেলওয়েকে সরকারের একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) এবং বিসিএস (রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক) এ দুই ক্যাডারের মধ্য থেকে সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মহাপরিচালক পদায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল থেকেই এই রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
সেখানে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী আগামী ৮ ডিসেম্বর পিআরএল-এ যাবেন। ফলে তার আগেই মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে মহাপরিচালক পদে পদায়ন করা হবে- এটা রেলওয়েতে কর্মরত সকলের প্রত্যাশা।
স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। সে আলোকে নিয়োগবিধি অনুযায়ী রেলওয়ের উভয় ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মাধ্যমে পদটি পূরণযোগ্য। সম্প্রতি রেলওয়েতে কর্মরত নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা পদটি পূরণ/নিয়োগ করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
রেলওয়েতে কর্মরত নয়, এমন কর্মকর্তা মহাপরিচালক পদে পদায়ন করা হলে সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে, যা সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার অন্তরায়। বিষয়টি চলমান বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থী বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, কারিগরিভাবে বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকরা ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে রেলওয়েতে চাকুরি করার পরে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান। সুদীর্ঘ চাকুরি জীবনে বিভিন্নস্তরের পদে কর্মরত থেকে রেলওয়ে অপারেশন, বাজেট ব্যবস্থাপনা, রেল নেটওয়ার্ক, বাণিজ্যিক কার্যক্রমসহ বিশেষায়িত কার্যক্রম (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, স্টোরস ম্যানেজমেন্ট এবং পরিবহণ ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা) সম্পাদনের মাধ্যমে মহাপরিচালক পদের দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করেন। রেলওয়ের অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনা কর্মকর্তার পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করা সম্ভব নয়। ফলে রেল পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ নিরাপদ ও সুষ্ঠু রেল অপারেশন এবং যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করে মহাপরিচালকের পদটি বর্তমানে কর্মরত বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) এবং বিসিএস (রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক) ক্যাডার থেকে সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা পদায়নের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয় স্মারক লিপিতে।
স্মারকলিপিটি প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা সারাবাংলেকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমাদের চাকুরি জীবনে প্রত্যেকেরই একটা লক্ষ্য থাকে। আমাদেরও স্বপ্ন থাকে ডিজি হওয়ার।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি বিশেষ কোনো বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ক্যাডার (রেল নয়) থেকে এবার মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, রেলওয়ের মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে এর আগেও সমালোচিত হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, মহাপরিচালক নিয়োগে গত দুই মেয়াদে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে ডিজি নিয়োগ দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম