Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করাচি-চট্টগ্রাম রুটে ‘সম্ভাবনা’ দেখছেন বন্দর চেয়ারম্যান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি রুট চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বন্দরের শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গত ১১ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচি থেকে ৩২৮টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইউয়ান শিয়াং ফা ঝাং’। কনটেইনার খালাস করে পরদিন জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ‘এইচ আর শিপিং লাইন’, যেটি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরে পাকিস্তান থেকে প্রথমবারের মতো সরাসরি আসা এ জাহাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

করাচি-চট্টগ্রাম রুটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে যাত্রা করে মাঝপথে করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। জাহাজটির রুট ছিল দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে পাকিস্তানের করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, এরপর ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-ভারত হয়ে আবারও দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর। জাহাজটি ২৩০০ কনটেইনার পরিবহণে সক্ষম। কিন্তু আমদানির চাহিদা কম থাকায় জাহাজটি মাত্র ৩২৮টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।’

আমদানি কনটেইনারের চাহিদা বাড়লে নিয়মিত করাচি-চট্টগ্রাম রুট দিয়ে জাহাজ পরিচালনায় মালিকরা আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে পাকিস্তানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানি হতো। নতুন এই রুট চালু হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। সাশ্রয়ী ব্যয় এবং সময়ে উভয় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও পরিচালনার সিদ্ধান্তের কথা জানান চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান।

তিনি জানিয়েছেন, এনসিটি পরিচালনার জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ছয় মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে। বে টার্মিনালে বিদেশি প্রতিষ্ঠান পিএসএ সিঙ্গাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘ওপেন ইকোনমিতে আপনি একা চলতে পারবেন না। আপনাকে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। একা হয়তো চলতে পারবেন, কিন্তু অথনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে না, উন্নতি করা যাবে না। সুতরাং ইনক্লুসিভনেস লাগবে। যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, বন্দরের স্বার্থে নেওয়া হবে। বন্দর যেখানে উপকৃত হবে, সাধারণ মানুষ যেখানে উপকৃত হবে, রাষ্ট্র যেখানে উপকৃত হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থের কোনো বিষয় নেই।’

গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নেয়ার পর গত তিনমাসে চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে আট লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউস। এটা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬ হাজার ৯৮৬ টিইইউস বেশি। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত তিনমাসে বন্দরে কনটেইনারের স্থিতি ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দর এখন রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঝুঁকিমুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ’১৪-১৫ বছর ধরে পড়ে থাকা চারটি অতিদাহ্য সোডিয়াম নাইট্রোক্লোরাইড ভর্তি ট্যাংক কনটেইনার নিলামের মাধ্যমে বন্দর থেকে সরানো হয়েছে। বিপজ্জনক আরও ৯টি কনটেইনার শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ৪ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর ১৬৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। সেবার মান ঠিক রেখে ব্যয় সাশ্রয় করায় রাজস্ব সঞ্চয় হয়েছে ২৮ শতাংশ বেশি।

চট্টগ্রাম বন্দরে ‘বিগত সরকারের’ আমলে তৈরি সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে সময় দেওয়া ২৩টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্স ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমূলক এবং অধিকতর ব্যবহারবান্ধব করতে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য যেসব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন, সবগুলো আমরা গ্রহণ করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমান, সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

আমদানি-রফতানি করাচি-চট্টগ্রাম রুট চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর