Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দিনের আলোতেও রোহিঙ্গাদের ভয়!


২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৪:১৫

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হওয়া এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়াতে এখনো তারা ভয় পাচ্ছেন। ভয় কাটাতে না পারায় নারীরা দিনের বেলাতেও ক্যাম্পে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন, ভয় এবং আতঙ্কে থাকছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিরাপত্তার অভাব রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ইউমেন্স হিউম্যানিটারিয়ান প্লাটফর্ম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার সকালে এসব তথ্য জানান হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘প্রসঙ্গ: মানবিক বিপর্যয় ও রোহিঙ্গা’এই শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মী রওশন আরা বলেন, ‘ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা কিশোরীরা দিনের বেলাতেও বাইরে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারা এখনো নিরাপদবোধ করছেন না। কিশোরী বা নারীদের আড়াল করে রাখা হয়। দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হওয়াতে এখনো তারা ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে অনিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করেছেন। তারা প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তারা যখন মিয়ানমারে ছিলেন তখন রক্ষণশীল পরিবেশে ছিলেন। সেখানে অন্য কারো সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ ছিল না। আবার এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আগে থেকে কোনো সম্পর্ক বা পরিচয় ছিল না। ফলে, মিয়ানমারেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন— আর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার সময়েও তারা এই বিষয়টি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। ফলে এখনো তারা স্বাভাবিক হতে পারছেন না।’

বিজ্ঞাপন

সুলতানা কামাল বলেন, “বিকেল ৫টার পর ক্যাম্পে কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না। জরুরি চিকিৎসা সেবার বিষয়টি কষ্টকর। ধর্ষিত এবং নির্যাতিত নারীদের মধ্যে ‘নিস্তব্ধতা’ বিরাজ করছে। তাদের জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু করা প্রয়োজন। এদিকে ক্যাম্পে কোনো স্কুল নেই। বাচ্চাদের কাছে অনেক খেলনা সামগ্রী রয়েছে কিন্তু কোনো বই-খাতা দেখা যায়নি।”

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পে অবস্থানরত রিফ্যুজিদের কাজ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদেরকে সাংগঠনিক বা গঠনমূলক কোনো কাজে যুক্ত করা হয়নি। রিফ্যুজিদের ক্যাম্পের বাইরে যাবার অনুমতি নেই এবং তাদের কাজ করার কোনো অধিকার নেই।’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘স্থানীয় শ্রমবাজারে রিফ্যুজিরা ঢুকে পড়েছেন। এতে ৫০০ টাকার শ্রমমূল্য ১০০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে স্থানীদের মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষ ও ক্ষোভ কাজ করছে। উখিয়ার হিন্দুপাড়া ক্যাম্পের প্রায় ৫০০ জনের মতো সংখ্যালঘু রিফ্যুজিরা খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। এই ক্যাম্পে সাধারণ সুবিধা, খাবার ও বাসস্থানজনিত সেবার ক্ষেত্রে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। ত্রাণ ও সেবা দেওয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।’

বাংলাদেশ ইউমেন্স হিউম্যানিটারিয়ান প্লাটফর্ম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিকসহ সার্বিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে ১১টি সুপারিশ পেশ করে। সুপারশিগুলো হলো— আশ্রয় শিবিরগুলোতে নারী মাঝি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া। স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি, পয়ঃনিস্কাশন, শিশুর খাদ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়া। ঝুঁকিপূর্ণ রোগ প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা। ক্যাম্পে রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা। নারীবান্ধব সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো। মনোসামাজিক পরামর্শ কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেওয়া।

সারাবাংলা/জেআইএল/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর