পুরুষবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি ‘এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন’র
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৪
ঢাকা: পুরুষবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী ও ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ‘এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন’।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে সংগঠনটি উদ্যোগে পুরুষের প্রতি আইনি বৈষম্য দূর করার দাবিতে র্যালি ও পথসভায় এ সব দাবি তুলে ধরা হয়। এদিন রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালি ও পথসভার আয়োজন করা হয়।
পথসভায় এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরুষ হচ্ছে এই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার একটি জাতিগোষ্ঠী। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আইনি এবং সামাজিক বৈষম্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এবং ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে আমাদের ১৩ দফা দাবি পূরণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি ১৩ দফা দাবি লিখিত আকারে পেশ করেন।
১৩ দফা দাবি-
১. অপহরণ: বিবাহের উদ্দেশ্যে বা প্রেম গঠিত কারণে ছেলে-মেয়ে উভয়ে পালিয়ে গেলে শুধুমাত্র ছেলে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়। এই কৃতকর্মের জন্য শুধুমাত্র ছেলের শাস্তি বিধান হওয়াটা অযৌক্তিক বিধায় তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। [বিবাহের উদ্দেশ্যে বা প্রেমঘটিত কারণে কোনো ছেলে বা মেয়ে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গেলে উক্ত ঘটনাকে অপহরণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা।]
২. পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০-এ সংযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে শিশু ও নারীর পাশাপাশি পুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ বলা যাবে না এবং এই ক্ষেত্রে যদি শাস্তি হয় তাহলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
৪. নারী ধর্ষণ ও শিশু ধর্ষণ আলাদা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করে পুরুষ ধর্ষণের সংজ্ঞা তৈরি করে লিঙ্গনিরপেক্ষ ধর্ষণ আইন তৈরি করতে হবে।
৫. পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা, সভ্য সমাজ ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত আইন এবং পুরুষদের মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশীয় আইনে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে সৃষ্ট তথাকথিত বৈবাহিক ধর্ষণের ধারণার অনুপ্রবেশ না ঘটানো।
৬. মিথ্যা ধর্ষণ মামলা প্রমাণিত হলে মামলাকারীর বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান থাকতে হবে। (ধর্ষকের সমমান শাস্তির বিধান করতে হবে)।
৭. যৌতুক সংক্রান্ত মামলায় সমন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর পূর্বে তদন্ত প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা।
৮. পুরুষের লিঙ্গ কর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে কোনো পুরুষকে পুরুষত্বহীন করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে হবে।
৯. বহুবিবাহ প্রতারণারোধে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটালাইজ করা।
১০. পুরুষের মানবাধিকার রক্ষা ও পুরুষ নির্যাতন রোধে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
১১. কাবিন বাণিজ্যরোধে সাধ্যের অতিরিক্ত কাবিন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, বিধান থাকতে হবে।
১২. ব্যভিচারের ৪৯৭ ধারা কে সংশোধন করে পরকীয়ায় আসক্ত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
১৩. পুরুষবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
এর আগে, এ দিন র্যালি ও পথসভা উদ্বোধন করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব পীরজাদা শহীদুল হারুন। পুরুষ দিবস উপলক্ষ্যে নারীরা অতিথি ও অন্য শ্রেণিপেশার মানুষকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
পথসভায় বক্তারা পুরুষের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্যপূর্ণ আইনের মাধ্যমে নানাবিধ হয়রানি ও পুরুষ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
‘এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন’র সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাউসার হোসেন, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন, অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী হাসান মাহাদী লাল্টু, ব্রেইন অ্যান্ড লাইফ হসপিটালের ব্যবস্থাপক ফখরুল হোসেন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি মো. তাওহীদুর রহমান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি হাদিউজ্জামান পলক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ইফতেখার হোসেন।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম