‘যেসব সংবাদমাধ্যম ছাত্র-জনতাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছিল তাদের চিহ্নিত করা হবে’
২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩২ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৮
ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে অনেক সাংবাদিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, আমি তাদের সেলুট জানাই। কিন্তু কোনো কোনো গণমাধ্যম আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ‘সন্ত্রাসী’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
গত ১৬ বছরে কে কিভাবে সাংবাদিকতা করেছেন তা দেখা হবে। কোন কোন গণমাধ্যমে ‘ফ্যাসিবাদী বয়ান’ দিয়েছেন তা চিহ্নিত করা হবে বলেছেন তিনি।
বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা: জবাবদিহিতা ও সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশে যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ তৈরি হলো, তাদের পেছনে কিন্তু কতিপয় কিছু সাংবাদিক কাজ করেছেন। কারা করেছেন; কীভাবে করেছেন সেগুলো দেখতে হবে। যারা ২০১৪ ও ২৪-এর নির্বাচনে ভয়াবহভাবে সমর্থন দিয়েছেন, তাদেরও দেখা হবে। আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কারা অগ্নিসংযোগ করল, তারা কারা। মিডিয়া কাদের ওপর দোষ চাপাল এগুলোও দেখা উচিত। এছাড়া গত ১৬ বছরে গুম, খুন নিয়ে কী ধরনের সাংবাদিকতা হয়েছে সেটিও জানতে হবে।’
দীর্ঘ সময় ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সে কী ধরনের ফ্যাসিবাদী বক্তব্য দেওয়া হতো, কীভাবে তোষামোদ করা হতো এবং সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘অতীতে নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বলা হতো ওরা জঙ্গি, ওরা সন্ত্রাসী। তাদেরকে নির্বাচন করতে দেওয়া যাবে না। এসব গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।’
অতীতে যারা সঠিক সাংবাদিকতা করতে চেয়েছেন তাদের শিবিরসহ বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে ক্রিটিসাইজ করা হতো উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যেন সেই ফ্যাসিবাদী আচরণ আবারও ফিরে না আসে। যেভাবে ওরা মুক্ত সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, আমরা যেন সেটি না করি।’
উল্লেখ্য, ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা: জবাবদিহিতা ও সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে গণমাধ্যম সংস্কারে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
১. স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের জন্য অনেকগুলো নীতি ও আইন প্রণয়ন করে গেছে। কিন্তু সবই করেছে নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা থেকে। তাই বিদ্যমান সব নীতি-আইন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা পরিমার্জনা করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সঠিক তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার সম্ভব হবে।
২. বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে, স্বাধীন সাংবাদিকতা করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৩. মিডিয়ার মালিকানা ও অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বার্থপরায়ণতা এড়ানো যায়। বড় করপোরেট ও রাজনৈতিক দলের মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনি কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।
৪. যে কোনো সময় যে কোনো টেলিভিশন ও পত্রিকা সরকার বন্ধ করে দিতে পারার যে ভয়ংকর পদ্ধতি বা নীতি রয়েছে, তা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। ভবিষ্যতে আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভির মত কোন গণমাধ্যম যাতে বন্ধ না হয়।
৫. সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন ও পেশাগত সুরক্ষার জন্য টেকসই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একটি গণমাধ্যম কমিশন ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
৬. গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের মাঝে লভ্যাংশ বণ্টন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে কমিটি গঠন করতে হবে।
৮. একটি স্বতন্ত্র মিডিয়া কমিশন গঠন করা যেতে পারে, যা সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মিডিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা, বেতনসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবে।
সারাবাংলা/এসএইচএস/ইআ