Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস
‘জি-২৫ সিন্ডিকেটে’র দৌরাত্ম্যে পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৫৯

রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। ছবি: সারাবাংলা

রাজশাহী: অফিস সময় শুরুর আগেই বিশেষ কিছু ফাইলে সই করে দেন রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক রোজী খন্দকার। তারপর এসব ফাইলের পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের ছবি তোলার কাজ শুরু হয়। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অভিযোগ, দালালের মাধ্যমে যেসব ফাইল জমা হয়, সেগুলোর কাজই কেবল শেষ হয় দ্রুত।

কয়েকমাস ধরে এমন অনিয়ম চলছে অভিযোগে প্রতিবাদে সড়কে দাঁড়িয়েছে রাজশাহীর নাগরিক সমাজ। বুধবার (২০ নভেম্বর) নগরের শালবাগান বাজারে পাসপোর্ট অফিসের সামনে মানববন্ধন করে এই অনিয়ম দূর করার দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরে উপপরিচালক রোজী খন্দকারের সঙ্গে দেখা করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অনিয়ম দূর করতে একমাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে নাগরিক ভোগান্তি দূর না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

জানা যায়, উপপরিচালক রোজী খন্দকার পাসপোর্টের ‘জি-২৫’ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পরিচিত। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আবু আসাদ যখন পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ছিলেন, তখন তার ছত্রছায়ায় তৎকালীন পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ‘জি-২৫’ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসে।

ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ২৫ লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের কারণে এই সিন্ডিকেট পরিচিতি পায় ‘জি-২৫ সিন্ডিকেট’ হিসেবে। সিন্ডিকেটের ২৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই সময় কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

বিজ্ঞাপন


মানববন্ধনের পর পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালকের কক্ষে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ছবি: সারাবাংলা

এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ও ভারতীয়দের নামে পাসপোর্ট ইস্যু, একই ব্যক্তির বিভিন্ন নামে একাধিক পাসপোর্ট ইস্যু, দালাল-সিন্ডিকেট প্রতিপালন, পদোন্নতি-প্রাইজ পোস্টিং দেওয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। রাজশাহীর এখনকার উপপরিচালক রোজী খন্দকার ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্পে থাকার সময় এই সিন্ডিকেটে জড়িত হয়েছিলেন।

এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তির দাবিতে ‘ভুক্তভোগী রাজশাহীর সাধারণ জনগণে’র ব্যানারে বুধবার অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। এতে বক্তব্য রাখেন সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, ক্যাব রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলার সম্পাদক মাহমুদুল হক, নারীনেত্রী রোজিটি নাজনীন ও সেলিনা বেগমসহ অন্যরাঅ।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, তারা লক্ষ করেছেন যে দালালের মাধ্যমে আসা বিশেষ ফাইলগুলো সরাসরি দোতলায় উপপরিচালক রোজী খন্দকারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এসব ফাইলে সই করে দেন। তারপর দোতলাতেই সহকারী পরিচালক এসব ফাইল কম্পিউটারে এন্ট্রি করেন। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাইলগুলো নিচতলায় চলে আসে। সেখানে ছবি তুলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্টপ্রত্যাশীরা বাড়ি ফিরে যান।

বক্তারা বলেন, এর বিপরীতে যারা দালালকে অতিরিক্ত টাকা না দিয়ে নিজেরাই লাইনে দাঁড়ান, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিচতলায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েই থাকতে হয়। এর ফলে রোজ অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

মানববন্ধনে তারা আরও বলেন, দালাল না ধরে ফাইল নিয়ে গেলে শুধু ভুলই খোঁজেন কর্মকর্তারা। আর দালালের মাধ্যমে ফাইল গেলে কিছুই দেখা হয় না। দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের প্রত্যেক কর্মকর্তা প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছেন। আর নিচতলায় একজন ব্যক্তি সাধারণ মানুষের পাসপোর্টের ফাইল এন্ট্রি করেন। মাঝে মাঝেই তিনি আবার ডেস্ক ছেড়ে উঠে যান। ফলে সাধারণ মানুষের লাইন আর এগোয় না।

যত দ্রুতসম্ভব এসব অনিয়ম বন্ধ করে পাসপোর্ট অফিসের জনবল ও ছবি তোলার কক্ষ বাড়ানোর দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

মানববন্ধন শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব বিষয় নিয়ে উপপরিচালক রোজী খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে তার কক্ষে যান। এ সময় রোজী খন্দকার সব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে বলেন।

এ সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান তাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে নাগরিক ভোগান্তি দূর করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এদিকে পাসপোর্ট অফিসের সূত্রগুলো বলছে, ‘জি-২৫’ সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ার পর রোজী যেখানেই গেছেন, সেখানেই মানুষকে জিম্মি করে উপরি উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন। রাজশাহীতে পদায়নের আগে তিনি ছিলেন জয়পুরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। তিনি সেখানে থাকার সময়ও দালালদের প্রতিপালন করতেন। দালাল না ধরলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। কয়েক মাস আগে তিনি রাজশাহী কার্যালয়ে যোগ দিলে এখানেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপপরিচালক রোজী খন্দকার বলেন, পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

সারাবাংলা/টিআর

পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম রাজশাহী রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস সিন্ডিকেট-২৫

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর