দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দরকার: আনু মুহাম্মদ
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:২৭
ঢাকা: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে একটা প্রস্তুতি এবং রোডম্যাপ দরকার। নির্বাচনের উদ্যোগ কবে গ্রহণ করা হবে, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, নির্বাচনের পথ দীর্ঘায়িত হবে কিনা- এ বিষয়গুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট একটা ঘোষণা না আসলে একটা অনাস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখান থেকে বাঁচার জন্য সুষ্পষ্ট পথনকশা ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করি।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সেই প্রস্তাবগুলোর আলোকে সরকারের ১০০দিন পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করে মতামত প্রদান করা হয় সংগঠনের পক্ষে। সংগঠনটির পক্ষে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন গবেষক মাহা মির্জা। তার প্রস্তাবনা মূল্যায়ণ করে বক্তব্য দেন আনু মুহাম্মদ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, নির্বাচনটাও একটা সংস্কারের মধ্য দিয়ে আসবে। সরকারের কথাবার্তা থেকে আমরা শুনতে পাচ্ছি যে তারা নির্বাচন কমিশন গঠন করছেন এবং নির্বাচন কমিশনের সার্চ কমিটি আজকে নাম জমা দেবে। সেই নামের ভিত্তিতে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্যে যে ধস নেমেছিল তা দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০০৮ এর পরে আর আসলে কার্যত নির্বাচন হয় নাই। ২০০৮ এর পরে ২০১৪ সাল থেকে হাসিনা সরকার ছিলেন মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার বা অনির্বাচিত সরকার।
‘সুতরাং নির্বাচনের যে ধস নেমেছিল সেটাকে আবার মেরামত করতে হবে, সংস্কার করতে হবে। সেটা সংস্কার করে যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত’- বলে মত প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ।
বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে প্রধ্যান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, অনেকগুলো দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার আছে যেগুলো স্থায়ী সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। অন্তবর্তী সরকার হিসাবে অনেকগুলোর ভিত্তি তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যে যে কমিশনগুলো গঠণ করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার তার মধ্য দিয়ে অনেকগুলো ভিত্তি তৈরি করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি যে কোনো কাজ আপনি যদি গুরুত্ব এবং দক্ষতার সঙ্গে করেন তাহলে যত সময় লাগবে আর যদি গুরুত্বের সঙ্গে না নেন তাহলে আরও অনেক বেশি সময় লাগবে। কাজেই সরকার এটা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে এবং যথাযথ যত শিগগির সম্ভব সে বিষয়ে জনগণকে পরিষ্কার বক্তব্য দেবে।
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বিভিন্ন গোষ্ঠী বা অংশ তারা যে দাবি দাওয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে সেই দাবিদাওয়াগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধান করারও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, তাদের দাবিদাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ বহু বছর মানুষের মধ্যে বঞ্চনা, ক্ষোভ আছে। অনেক রকম সমস্যা আছে। সেগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। জোরজবরদস্তি, ধরপাকড় কিংবা কেউ আন্দোলন করলেই তাকে অপরাধী ট্যাগ লাগানো -এই প্রবণতা অতীতের সরকারের সময় ছিল। এই ধারা যেনো অব্যাহত না থাকে।
সম্প্রতি অটোরিকশা বা অন্যান্য পেশাজীবীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্থি করে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এটা আলোচনা করতে হবে। তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন আছে তাদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। সমাধানের পথে যেতে হবে। জোর জুলুম না করে যথার্থ দাবিগুলো শুনে যেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব এই সরকার করবে। যেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না সেটার প্রক্রিয়াটা চালু করবে। এটিই আমরা আশা করি। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মর্যাদা দিয়েই সরকারের ভূমিকা পালন করলে আমি মনে করি যে অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হবে।
আগামী ২৩ নভেম্বর বিকাল তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের সকল শ্রেণীগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মানুষের সম্মিলনে বৈচিত্রের ঐক্য সমাবেশের আহ্বান করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, সীমা দত্তসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এনআর/এনজে