প্রায় তিন বছর ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা দিনদিন বাড়ছেই। ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার মধ্যেই এবার রাশিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। এই যুদ্ধে এ রকম দূরপাল্লার প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার এই প্রথম।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা অবশ্য এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে। আর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করা হয়নি।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাশিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার অ্যাস্ট্রাখান অঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে। এই অঞ্চলটি ভলগোগ্রাদের দক্ষিণপূর্বে ও কাস্পিয়ান সাগরের কাছাকাছি অবস্থিত।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাতে ডিনিপ্রো শহরের কেন্দ্রীয় পূর্বাঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়ার আক্রমণগুলো চালানো হয়।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এখনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। আইসিবিএম প্রতিহত করতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করেছে কিনা, তা নিয়েও কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ছয়টি কেএইচ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে।
আইসিবিএম তথা আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। প্রধানত পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্যই এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে প্রচলিত বিভিন্ন অস্ত্রও এটি বহন করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
এদিকে পশ্চিমা একজন কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, ডিনিপ্রোতে হামলার জন্য রাশিয়া যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, তবে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়। এটি সুনির্দিষ্টভাবে কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য ইউক্রেন বা পশ্চিমা ওই কর্মকর্তার দাবির কোনোটি নিয়েই মন্তব্য করা হয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করতে রাজি হননি। তিনি এ বিষয়ে জানার জন্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, ভারত ও উত্তর কোরিয়া— কেবল এই আটটি দেশেরই আন্তঃমহাদেশীয় এই ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে জানা যায়। ইউক্রেনে রাশিয়া এই অস্ত্র ব্যবহার করে থাকলে তা এই যুদ্ধকে আরও বেশি প্রাণঘাতী করে তুলবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।