‘৩ পদের সবজি কিনতেই ৫০০ টাকা শেষ!’
২২ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আমি তিন দিন পর পর বাজারে আসি। তিন দিনের বাজার একবারেই নিয়ে যাই। আজ ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। তিন পদ কিনতেই সব টাকা শেষ। আলুর দাম ৭০ টাকা, খাট্টা বেগুন (টমেটো) ১৫০ টাকা। খাব কী, চলব কীভাবে !’
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচাবাজার করতে আসা নগরীর বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী সালমা খাতুন এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, টানা দু’সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা আলুর দর এ সপ্তাহে আরও বেড়েছে। পাইকারিতে মানভেদে আলুর দাম কেজিপ্রতি অন্তত তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। আর খুচরায় বেড়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি সবজির আড়ৎ দয়াল ভাণ্ডারের মালিক জোবায়ের হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে দেশি আলু ৬০-৬১ টাকা বিক্রি করেছি। এ সপ্তাহে ৬২-৬৩ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন আলু আবার ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে ইন্ডিয়ান আলুর দাম কম আছে। সেটা আমরা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ইন্ডিয়ান আলুর সাপ্লাই ঠিক আছে। দেশি আলু এখনও কম আসছে।’
খুচরায় আলুর দাম চট্টগ্রামের একেক বাজারে ও অলিগলির দোকানে একেকরকম দেখা গেছে। নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের কাঁচাবাজারে বিভিন্ন ধরনের আলু মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানে প্রতিকেজি ৭৫ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একেবারে সদ্য ক্ষেত থেকে তোলা শীতকালীন লাল আলু ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. রায়হান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলু আমরা ৭০-৭২ টাকা বিক্রি করছি। কিছু কিছু দোকানে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো পুরনো আলু। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম খুচরায় ৮-১০ টাকা বেড়েছে।’
পেঁয়াজের দর গত দু’সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও এ সপ্তাহে এসে স্থিতিশীল হয়েছে। এ সপ্তাহে দর বাড়েনি। চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া, পাকিস্তানি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১১০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে খুচরায়। সে হিসেবে পাকিস্তানি ও মিশরের পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজিতে অন্তত ১০ টাকা কমেছে। তবে এ পেঁয়াজের খুব বেশি চাহিদা নেই ভোক্তাদের কাছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মো. ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজ আসতে অন্তত এক মাসের বেশি সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকবে। এজন্য দামও কিছুটা বাড়তি।’
ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম পাইকারিতে ঠিক থাকলেও খুচরায় আবারও ডজনপ্রতি অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলীর মোড়ে বিসমিল্লাহ অ্যান্ড সন্স নামে একটি মুদির দোকানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিম প্রতিডজন ১৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে খুচরায় দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা।
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল আছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে সাইজভেদে ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা দরে। সোনালি মুরগির দামও প্রতিকেজিতে অন্তত ৫০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম মোটামুটি কম আছে। কাঁচামরিচের দামও কমে আসছে। বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে টমেটো মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, ধনিয়াপাতা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাল শাক, মূলা শাক, পুঁই শাক ও মিষ্টি কুমড়া শাক ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পেঁপে মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়া কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ, ঝিঙা, পটল, বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কাঁকরোল, মূলা ৬০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে যাওয়া ক্রেতা মো. বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দাম বেশি, সেজন্য অবস্থা খারাপ। তিনটি বেগুন কিনেছি ১০০ টাকায়, এক কেজির কম। নতুন লাল আলুর দাম ১৪০ টাকা। কেনার সাহসও করিনি। আমাদের চলতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। শীতকালে সবজির দাম হওয়ার কথা ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৩০ টাকা। এখন দাম ৯০-১০০ টাকা। এর নিচে কিছু নেই।’
সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় মাছের দর চড়া হয়েছিল, সেটা এখনও ধরে রেখেছেন বিক্রেতারা। বাজারে আকার ও ওজনভেদে ইলিশের মধ্যে জাটকা বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, মাঝারি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রামের ইলিম ১ হাজার ২০০ টাকা ও এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকার ওপরে।
অন্যদিকে রুই-কাতলা মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বড় আকারের চাষের কই ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, চিতল ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, চালসহ শুকনো পণ্যের দামও গত সপ্তাহের মতোই আছে। বৃহস্পতিবার কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২ হাজার ৭০ টাকা, বেতি আতপ ৩২৩০ থেকে ৩২৮০ টাকা, হাফসিদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা, চিনিগুড়া ১৫০ টাকা, পাইজাম আতপ ১৭৭০ থেকে ১৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই কেজি প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা এবং ময়দা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের মধ্যে দেশি রসুন ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটের চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম