Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির অনুমোদন প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখছে সরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৫

ঢাকা : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি (বিওবিসিএল)-এর অনুমোদন প্রক্রিয়া ও বৈধতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটির পাওয়া অনুমোদনের বৈধতা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, এদিকে এখনও সরকারের অনেক শর্ত পূরণ করতে পারেনি বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড । এছাড়া উৎপাদিত পণ্য শুধু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর কাছে বিক্রি করার শর্ত থাকলেও কেরানিগঞ্জের প্ল্যান্ট থেকে বাইরে জ্বালানি তেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে কোম্পানির বিরুদ্ধে।

সূত্র মতে, কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে সামিটের দ্বিতীয় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত মতো বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির অনুমতিও বাতিল করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি দিয়ে গত ১৮ জুলাই বসুন্ধরাকে চিঠি দেয় বিপিসি। এতে চুক্তি করার আগে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও ৩৮৮টি ফিলিং স্টেশনের সমন্বয়ে নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থা তৈরিসহ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত বসুন্ধরার পক্ষ থেকে কোন কর্ম-পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়নি।

এছাড়া অনুমোদন পত্রে ৩৭টি শর্ত বেঁধে দেয় জ্বালানি বিভাগ। সরকারি এসব শর্ত ভঙ্গ করলে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমোদন বাতিল করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। শর্তের মধ্যে রয়েছে পরিচালনা ও তেল বিক্রি নিয়ে বিপিসির সঙ্গে চুক্তি ও নিরাপত্তা জামানত প্রদান করা, প্রথম তিন বছর উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ৬০ শতাংশ বিপিসির কাছে ও বাকি ৪০ শতাংশ নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থায় বিক্রি এবং পরবর্তী দুই বছর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত তেল বিপিসির বাইরে বিক্রি করার সুযোগ। তেলের দাম নির্ধারণ করবে বিপিসি। বিপিসির চাহিদা না থাকলে সংস্থাটির কাছ থেকে অনাপত্তি নিয়ে বাজারে বা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে জ্বালানি তেল।

বিজ্ঞাপন

শর্তে আরও বলা হয়, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তেল বিক্রির জন্য তিন বছরে সারা দেশে ৩৮৮টি ফিলিং স্টেশন বা পরিবেশক নিতে পারবে বসুন্ধরা। যেসব সিএনজি ও এলপিজি স্টেশনের তেল বিক্রির অনুমতি নেই, তারাও বসুন্ধরার পরিবেশক হতে পারবে। সরকারি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পরিবেশকেরা চুক্তি বাতিল করে বসুন্ধরার পরিবেশক হতে পারবে।

জানা যায়, জ্বালানি তেল সরাসরি বাজারে বিক্রির অনুমতি চেয়ে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরীর কাছে আবেদন করে বসুন্ধরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের জুনে আবার বিপিসির মতামত চায় জ্বালানি বিভাগ। জবাবে বেসরকারি খাতে সীমিত পরিসরে আমদানি ও বিপণনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে মতামত দেয় বিপিসি।

এরপর এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি নিয়ে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগ। গত বছরের ১১ জুন বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির নীতিমালার প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়। ওই বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি চেয়ে আবার আবেদন করে বসুন্ধরা অয়েল।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) একটি চিঠি পাঠায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে মজুত, পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রির বিষয়ে বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকারকর্মীদের মতে. জ্বালানি তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে দেওয়া হলে মানুষকে তা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। যেটা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত: প্রতিবছর দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ১৫ লাখ টন পরিশোধন করে সরকারি কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। বাকিটা পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। অপরিশোধিত তেল আমদানি করে দেশে পরিশোধন করলে খরচ কম পড়ে। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়াতে পারে।

সারাবাংলা/আরএস

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়