খুলনা মহানগর বিএনপি
সম্মেলন ঘিরে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৫২
খুলনা: বহু অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের দিকে এগিয়েছে খুলনা মহানগর বিএনপি। এরই মধ্যে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নসহ শান্তিপূর্ণভাবে মোট ৩৪টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। ১ ডিসেম্বরের মধ্যে মহানগরীর অন্তর্গত বাকি পাঁচ থানার সম্মেলন করে ফেলার ঘোষণা রয়েছে। আর ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মহানগরের সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সদর থানার অর্ন্তগত ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নসহ ৩৪টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এই ৩৪টি ইউনিটে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে।
মহানগরের আরও পাঁচ থানার সম্মেলন বাকি। সেগুলোর মধ্যে ২৭ নভেম্বর খানজাহান আলী থানা, ২৮ নভেম্বর দৌলতপুর, ২৯ নভেম্বর সোনাডাঙ্গা, ৩০ নভেম্বর খুলনা সদর ও ১ ডিসেম্বর খালিশপুর থানা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব ইউনিটেও সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা হবে শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ৩৪টি ওয়ার্ড-ইউনিয়ন সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটি গঠনে নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। একই সঙ্গে চলছে খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিতে জায়গা করে নিতে সাংগঠনিকভাবে সব নেতাই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কর্মদের সঙ্গে যেমন যোগাযোগ রাখছেন, তেমনি কেন্দ্রীয়সহ মহানগর ও জেলার নবীন-প্রবীণ সব নেতার সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চলছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিল্টন জানান, ২০২১ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিনের কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আল মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘একদিকে পতিত সরকারের দমন-পীড়ন ও মামলা, অন্যদিকে বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস— সবকিছু নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখেই ছিল। এখন সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রত্যাশা করছে সবাই।’
নেতাকর্মীরা বলছেন, আহ্বায়ক কমিটি প্রথমে নগর জুড়ে ৩৪টি ইউনিটে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছে। তাদের প্রতিনিধিদের ভোটে প্রথমে ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের ভোটের মাধ্যমে থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি।
মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেন, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মাধ্যমে গোপন ব্যালটে প্রথমে নগরীর পাঁচ থানার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নির্বাচিত করেন কাউন্সিলররা। পরে একই পদ্ধতিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছে।
মহানগর বিএনপি মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করেছেন। ফলে সব ওয়ার্ডে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা নেতৃত্বে এসেছেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
মহানগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে তারা এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন। থানা সম্মেলন ঘিরে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। ৩৪টি ওয়ার্ডে ইউনিয়নের দুই হাজার ৪১৪ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে থানার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচন করবেন।’
বিএনপির খুলনা সদর থানার সদস্য সচিব মো. ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘সদর থানার শাখার ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে নগর বিএনপির নির্দেশ পেয়েছি। সে লক্ষ্যে থানা সম্মেলনের আয়োজনে কাজ চলছে।’
সোনাডাঙ্গা থানার সদস্য সচিব সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা উৎসবের মাধ্যমে ওয়ার্ড সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রতিটি সম্মেলনে ছিল উৎসবের আমেজ।’
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক কাজ করতে হয়েছে। নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া ছিলেন। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করেছি। চলতি নভেম্বরে মহানগরীর সব থানার সম্মেলন শেষ করতে চাইছি। ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারাই নেতৃত্বে আসছেন। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘আমরা শতভাগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করেছি। এবার থানা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী কাজ করে যাচ্ছেন।’
সারাবাংলা/এইচআই