Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন হাসিনা: সাকি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:০১

রাজশাহী: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার মতো বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে এক গণসংলাপে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য’ এই গণসংলাপের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলা শাখা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেছেন, ‘৭৫ সালের বাকশাল ছিল ৭২-এর সংবিধানের ক্ষমতার কাঠামোর ধারাবাহিকতা। যেমনটা শেখ হাসিনা বাকশাল ২.০ তৈরি করতে গিয়েছিলেন ওই একই সংবিধানে। তিনি ভেবেছিলেন, গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল চলবে। সেটাই তিনি কায়েম করতে চেয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘৭২ সালে যে সংবিধান করা হয়েছে, সেখানে ৭১ সালের মানুষের যে আকাঙ্খা তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। ওই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানেরও ঊর্ধ্বে। সমস্ত রাষ্ট্র তিনি তার পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে পারেন। অনেকে বলে, ৭২-এর সংবিধান ঠিক আছে, ৭৫-এর বাকশালটা করা ঠিক হয় নাই। কোন কোন বামপন্থীরাও বলে। আমরা বলি, এই সংবিধান আমরা চাই না যা কোন শাসককে স্বৈরাশাসকে পরিণত করে।’

সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আগামী সংবিধান হতে হবে এই দেশের সমস্ত নাগরিককে সমান মর্যাদা দিয়ে। সেই নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় যা-ই হোক না কেনো। ধর্মীয় পরিচয় কিংবা জাতিগত মর্যাদা দিয়ে নাগরিকের মর্যাদা ঠিক হবে না। নাগরিকের মর্যাদা দিয়েই তার মর্যাদা ঠিক হবে। কোন লিঙ্গ পরিচয় কিংবা অন্য কোন কিছু দিয়ে নাগরিকের অধিকার হরণ করা যাবে না। নারী-পুরুষ প্রত্যেকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সংসদের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে। তাদের জবাবদীহিতার আওতায় আনতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নতুন সংবিধানে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। বিচার বিভাগকে আলাদা করতে হবে নির্বাহী বিভাগ থেকে। সরকার যেন বিচার বিভাগের ওপর কোনরকম খবরদারি করতে না পারে। গণমাধ্যম স্বাধীন করতে হবে এমনভাবে, যাতে করে আদালতের মতোই জনগণের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারে গণমাধ্যম।

সাকি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে। আইনের সংস্কার করতে হবে। আর তার ভিত্তিতে এমন নির্বাচন ব্যবস্থা আয়োজন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কেউ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। নতুন নির্বাচন কমিশন হয়েছে। আপনারা (নির্বাচন কমিশন) এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে আর কেউ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যদি পেতে হয়, তাহলে আমাদের একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। তার ভিত্তি হবে গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান নয়, হতে হবে একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান।’

সরকারি কর্মকর্তারা ফ্যাসিস্টকে সহায়তা করলে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সাকি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। পুলিশ, বিজিবি এমনকি সেনাবাহিনীকেও তারা ব্যবহার করেছে। প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান, জেনারেল আজিজ সম্পত্তি কীভাবে বানিয়েছে! ওই বেনজির আহমেদ কীভাবে সম্পদ গড়েছে! এরা এইভাবে লোভ-লালসা ও লুটের ভাগ-বাঁটোয়ারা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব কর্মকর্তারা কলুষিত করেছেন, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রত্যেকের কাছে বার্তা থাকা দরকার, কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি কোন অবৈধ সরকারের পা চেটে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে তার শাস্তি কী হবে সেটা সবার জেনে রাখা দরকার।’

বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ একটা আকাঙ্খা নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করেছে। তারা নতুন রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের সেই রাজনৈতিক শক্তি আছে? আমরা কি ছাত্র-জনতাকে এখনও ঐক্যবদ্ধ করে রাখতে পেরেছি? এই অভুত্থান দাবি করে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। কাজেই আগামী নির্বাচনের আগেই আমাদেরকে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।’

গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ। বিশেষ বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু। জেলার সদস্য সচিব জুয়েল রানা এই গণসংলাপ সঞ্চালনা করেন। গণসংলাপে রাজশাহীর শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

সারাবাংলা/এসআর

গণসংহতি আন্দোলন বাকশাল সাকি

বিজ্ঞাপন

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর