নির্বাচন সংস্কার কমিশন
আলোচনায় ‘না’ ভোট, রাষ্ট্রপতি ও নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২২:২৬
ঢাকা: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। এই কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। কমিশনে নানা ধরনের প্রস্তাব আসছে। রাষ্ট্রপতি ও নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, না ভোট এবং ভোট রিকল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা চলছে বেশি।
বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ নির্বাচিত হতে না পারে সেজন্য ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। কারণ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ রাখতে চায় না সংস্কার কমিশন। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন-ই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে চাইছে বলে জানিয়েছেন সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান।
অন্যদিকে, সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর করার কথা ভাবছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংবিধানের বিষয় হলেও নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় এ নিয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মতামত চায় তারা।
জানা গেছে, নির্বাচন সংস্কার কমিশন এ পর্যন্ত ছয়টি মতবিনিময় সভা করেছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজমুদার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি হওয়ার কথা আলোচনা হয়েছে। সব নির্বাচন প্রত্যক্ষ হওয়ার কথা বলেছেন কেউ কেউ। সেইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার বিষয়েও কথা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের কথা এসেছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা এসেছে। সংস্কার কমিশনও এ নিয়ে ভাবছে, বিশেষ করে প্রবাসীদের ভোটের ব্যাপারে। কত শতাংশ ভোট পেলে নির্বাচিত হবেন সে বিষয়েও আলোচনা চলছে। না ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য মত দিয়েছেন অনেকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন কেউ নির্বাচিত না হন, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি প্রার্থীরা যেন নির্দলীয় হন, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের প্রসঙ্গও এসেছে।
কমিশনের আরেক সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আগেই সংসদ নির্বাচনে গেলে সংস্কার প্রক্রিয়া পুরোপুরি থেমে যাবে। সেজন্য আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার পরামর্শও আছে।’
ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘অনেক ধরনের প্রস্তাবই আসছে। তবে সব প্রস্তাব নিয়ে আমরা আলোচনা করলেও সব বিষয় আমাদের এখতিয়ারে নেই। যারা প্রস্তাব করছেন তারা হয়তো বা সংবিধান এবং নির্বাচন কমিশনের ফারাকটা বুঝতে পারছেন না। আমরা যা করতে পারব তা নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধিমালায় যা আছে তার ওপর। তবে আমরা এর জন্য প্রয়োজনে কিছু সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবও করব।’
তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো লিখিত প্রস্তাব দেবে। তাদের সঙ্গে সরাসরি সরকার আলোচনা করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সংস্কার প্রস্তাবের খসড়া লেখা শুরু করেছি। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিতে পারব।’
ড. জাহেদ বলেন, ‘অনেকেই চাইছেন, রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু এটা করতে হলে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। এটা আমাদের পার্ট না। নির্বাচনের ব্যয়ে স্বচ্ছতা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ না থাকা, এগুলো আমরা দেখতে পারি। কিন্তু নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন হবে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার এমন সংস্কার আমরা করতে চাই, যাতে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হয়। জাতীয় নির্বাচন যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, তাহলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেন নয়? কিন্তু পাঁচ ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন আছে। তাই আমরা এমন ব্যবস্থার সুপারিশ করছি যাতে সব স্থানীয় নির্বাচন একদিনে করা যায়।’
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে আইন, সংবিধানসহ অনেক কিছুরই সংস্কার করতে হবে। ফলে সব মিলিয়েই প্রস্তাব করা হবে বলে জানান ড. তোফায়েল।
নির্বাচন কমিশনে এইসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা যখন সরকারের সঙ্গে বসব, কমিশনের সঙ্গে বসব, তখন আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরব। এখন নির্বাচন কমিশনে যে প্রস্তাব আসছে তার মধ্যে যেগুলো বাস্তবভিত্তিক সেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মানুষ যা চায় তার সঙ্গে আমরা একমত।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা আগেও নির্বাচন কমিশনে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সেগুলো তাদের কাছে আছে। আলোচনার সময় আমরা তা নিয়ে আবার কথা বলব। তবে যদি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন না হয় তাহলে অবশ্যই না ভোট ফিরিয়ে আনতে হবে।’
উল্লেখ্য, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ওয়েবসাইট ও ই-মেইলের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিচ্ছে। সেই মতামতের ওপর ভিত্তি করে সংস্কার প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। [কৃতজ্ঞতা: ডয়েচে ভেলে]
সারাবাংলা/পিটিএম