লাখ টাকার লোভে শাহবাগে এসে প্রতারিত অসহায় দরিদ্র মানুষ
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:২৫
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর ও শাহবাগ এলাকায় রবিবার (২৪ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকেই বড় বড় দুরপাল্লার বাস ও হাইয়েচ মাইক্রো জড়ো হতে থাকে। এরপর সেখান থেকে নামতে শুরু করে শত শত নারী পুরুষ। দেখে বোঝা যায় গ্রাম থেকে হত দরিদ্র লোকজনকে কেউ এখানে নিয়ে এসেছে।
এসময় জিজ্ঞাসাবাদেই তারা বলে দিলেন শাহবাগে আন্দোলনে যোগ দিতে তারা ঢাকায় এসেছেন। কিসের জন্য আন্দোলন তা তারা বলতে পারেন না। লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় তারা এসেছেন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেজে শাহবাগে জড়ো হতে থাকে হাজার হাজার লোক। একেবারে গ্রামের হত দরিদ্র যারা শাহবাগে এসে কিছুই বুঝছিল না। না আছে তাদের সকালের নাস্তা আর না আছে অন্য কিছু। কে দেবে নির্দেশনা আর কে দেবে বক্তব্য তারও কেউ নেই।
মাদারীপুর থেকে এসেছেন আফরোজা বেগম। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে বলেন, ‘এখানে আসলে এক লাখ টাকা দেবে, তাই আমরা এসেছি। বাস ভাড়া করে দিয়েছিল ওখানকার এক নেতা। সারাদিন থাকার পর রাতে আবার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা।’
নোয়াখালী থেকে এসেছেন নাজমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩০ জন এসেছি। এসে দেখি বিপদ। এখানে ছাত্ররা এসেছে। তারা খারাপ আচরণ করছে আমাদের সঙ্গে। তাদের প্রশ্ন কেন আসছি এখানে। যারা নিয়ে আসছে তাদের পাচ্ছি না।’
এই ফাঁকে নুরুল আমিন নামে একজন এসে নাম্বার দিয়ে বললেন, ‘এনারা আমাদের নিয়ে এসেছেন। এখন তাকে পাচ্ছি না।’
মোস্তফা আমীন নামে ওই লোককে কল করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। যে ঠিকানা দিয়েছে তাও মিথ্যা। কয়েকশো গাড়িতে করে মানুষ এনেছে শাহবাগে। গরিব মানুষ টাকা পাবে সে লোভে চলেও আসে রাত জেগে ভ্রমণ করে। ছাত্রদের উপস্থিতি টের পেয়ে এবং বিনা সুদে লোন পাবে এ লোভে যারা আসছিল তারা প্রতারিত হয়ে খালি হাতে ঢাকা ছাড়ছে।
এর আগে গতরাতে ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলে লক্ষ্মীপুরের হতদরিদ্র মানুষদের প্রলোভন দেখানো হয়। এরপর রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে ‘অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের কথিত সেই সমাবেশে নেওয়ার জন্য কমলনগর উপজেলার ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীকে একত্রিত করা হয়। জেলার কমলনগর উপজেলার করইতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
রাতেই স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে ৩টি চেয়ারকোচবাস ও ৪টি মাইক্রোবাস জব্দ করে। এ সময় ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা জোবের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘শাহবাগে সকাল থেকে অনেক লোক জড়ো হয়েছিল। তারা গ্রাম থেকে এসেছে এখানে আন্দোলন করতে। কিসের আন্দোলন, কেন তা তারা বলতে পারেনি। বেআইনি সমাবেশ আমরা করতে দেইনি। এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাও ছিলেন। যারা এখানে অবৈধ সমাবেশ ডেকে পালিয়েছে, সাধারণ মানুষকে লোভ দেখিয়ে, প্রতারণা করেছে আমরা তাদের খুঁজছি।’
উপকমিশনার আরও বলেন, ‘ছাত্রদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন প্রায় ৮০০ মতো বাস ঢুকেছিল শাহবাগ ও ঢাবিতে। প্রতারকরা নিবন্ধন বাবদ এক হাজার করে টাকাও নিয়েছে লোন দেওয়ার নামে। আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি।’
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই