দ্য কিং অব পিয়ংইয়ং
১২ জুন ২০১৮ ১৭:৪৮
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
সময়টা ছিল ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর। পিয়ংইয়ং-এ তখন কনকনে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। তীব্র তুষারপাতের মধ্যে রাস্তায় ধীরে ধীরে চলছে দীর্ঘ কালো রংয়ের লিংকট কন্টিনেন্টাল কারটি। গাড়ির ছাদের ওপর সাদা ক্রিসেনথিমাসের বিছানার ওপর রাখা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং ইলের মরদেহ।
কালো পোশাকে সড়কের দুই ধারে জমায়েত হয় হাজারো মানুষ। তারা বুক চাপড়ে কাঁদছিলো ‘পিতা’ ‘পিতা’ বলে। তাদের জোর করে সরিয়ে দিয়ে পথ করে এগুতে হচ্ছিল সেনাবাহিনীকে।
গাড়ীবহরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল ক্ষমতাসীন এক নায়কের ছেলে ও উত্তরাধিকারী কিম জং উন। তখন তার বয়স মাত্র ২৭ বছর। শবযাত্রায় পথের মাঝে কয়েকবার কান্নায় ভেঙেও পড়েন তিনি।
সোজাসুজি তার পেছনে হেটে আসছিলো চাচা চ্যাং সং থ্যায়েক। যাকে বিবেচনা করা হতো উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন ব্যক্তি। গাড়ির অন্যপাশে ছিলো চিফ অব আর্মি স্টাফ রি ইয়ং হো ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং চুন। তাদের মধ্যে থেকেই কেউ পিয়ংইয়ং-এর ক্ষমতায় বসবে, সেরকমই চিন্তা করছিলো সবাই।
১৯৫০ এর দশকে কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাং উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির জন্য এক নতুন আইন করেন। যার ফলে সেখানে বংশানুক্রমিক নেতৃত্বের প্রবর্তন হয়। কয়েক দশক ধরে কিম ইল সাং তার ছেলে কিম জং উনকে তৈরি করেন তার উত্তরাধিকারী হিসেবে। ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যুর পর কিম জং ইল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ২০১১ সালে হঠাৎ মৃত্যু হয় কিম জং ইলের। সে সময় দেশটির তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে কিম জং উন মাত্র নিজের শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেছেন। তখন অনেকেই ধারণা করেছিলো এবার ঝুঝি একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। অচিরেই তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ হতে শুরু করে।
কিম জং উন দায়িত্বগ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই চিফ অব স্টাফ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চাকরিচ্যূত করেন। তাদের মধ্যে রি ইয়ং হো এখন কোথায় আছে তার কোনো খোঁজও জানে না কেউ।
তবে কিম জং উন সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনাটি ঘটান ২০১৩ সালে। রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে নিজের চাচাকে দল থেকে বহিষ্কার করে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এরপর ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে আনেন ব্যাপক পরিবর্তন। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ইনস্টিটিউটের মতে সে সময় কিমের আদেশে ১৪০ জনের মতো ঊর্ধ্বতন সেনা ও সরকারি কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়াও ২০০ জনকে কারাবন্দি করা হয়।
এমন কি তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে যে কাউকে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না কিম। পরিবর্তে তাদের জায়গায় নতুন ও বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ দেয়। যারা কিমের ছোট বোন কিম জো জং-এর অধিনে পরিচালিত হয়।
২০১৭ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে যে পলিটব্যুরো সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এখন আর কারেও মনে সন্দেহ নেই কে পিয়ংইয়ং-এর দায়িত্ব নেবে। কে হবে তাদের সুপ্রিম লিডার।
কয়েক বছর আগেই পার হয়েছে কিম জং ইনের তীব্র শীতকাল। ২০১৮ সালের এপ্রিল। যেদিন উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতা একসঙ্গে তাদের সীমান্তে বসে উষ্ণ চা খেতে খেতে আলোচনা করছে। কিম গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
এ ঘটনার মাত্র কয়েকমাস আগেও অব্যাহত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে রীতিমতো হুমকিতে রেখেছিলেন।
১৯৯২ সালে পিয়ংইয়ংয়ে আয়োজন করা হয় ৮ বছর বয়সী এক শিশুর বিশেষ জন্মদিন। উত্তর কোরিয়ার আর্মি জেনারেলের পোশাক পরে জন্মদিনে উপস্থিত আট বছরের শিশুটি। অপর দিকে আসল জেনারেল তার পোশাক পরে এসে ছোট্ট জেনারেলকে স্যালুট দিলেন। সেই ছোট শিশুটি আজকের কিম জং উন।
সারাবাংলা/এমআই