পাওনা ১৫০০ কোটি
২০ ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে রাস্তায় ব্যাংককর্মীরা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করে ঋণখেলাপি ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদের কাছে ঋণ বাবদ সুদ-আসল মিলিয়ে ব্যাংকটির পাওনা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকটির কর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে এসব শিল্পপতিদের অনেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পেরে সামাজিকভাবে যাতে তারা অসম্মানের মুখোমুখি হন, সেজন্য ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, চট্টগ্রাম সার্কেল’র ব্যানারে শ’খানেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এতে চট্টগ্রাম সার্কেলের অধীন ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছিলেন। শাখা থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখা ব্যানার নিয়ে তারা মানববন্ধনে হাজির হন।
মূল ব্যানারে চট্টগ্রামের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ও দু’জন শিল্পপতির নাম উল্লেখ ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো হল- সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেড (ইউনিট-১ ও ২), মেসার্স জয়নাব ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ মাহমুদ, মেসার্স ম্যাক শীপ বিল্ডার্স, যার চেয়ারম্যান মো. আলা উদ্দীন, সিএসএস করপোরেশন (বিডি) লিমিটেড, ইন্ট্রাকো সিএনজি লিমিটেড, সামানাজ সুপার অয়েল, স্টার সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স আরাফাত ষ্টীল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেসার্স মিসম্যাক শীপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ, মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্স, মেসার্স এফ এন্ড এফ শীপ রিসাইক্লিং, মেসার্স মাহী ফিস প্রসেসিং লিমিটেড, এম রহমান ভিটা, এপিটি ফ্যাশন, শফিক ষ্টীল, রুবাইয়া ভেজিটেবল, মেসার্স স্টিল কন্সেপশন সী ফুড লিমিটেড, মেসার্স বাংলাদেশ ইলেকিট্রিসিটি মিটার কোম্পানি লিমিটেড, দোভাষ শিপিং লাইনস এবং মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ।
অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হক সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অধিকাংশই কৃষিঋণ, যা চট্টগ্রাম জেলা ও তিন পার্বত্য জেলায় বিতরণ করা হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের স্টাফরা অসহায় ছিলাম। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী লোকজন ওপরমহলে তদবির করে, অনেকসময় আমাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু যে ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম আমরা প্রকাশ করেছি, তারা সঠিক সময়ে ঋণগুলো ফেরত না দেয়ায় এখন পর্যন্ত পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৪৭০ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘হিসেবে এটা আরও বেশি। আমরা রি-শিডিউল করে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো নথিপত্র থেকে বাদ দিয়ে বাকি টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু সেটাও তারা দিচ্ছে না। শুনেছি, ঋণ পরিশোধ না করে অনেকে কানাডায় গিয়ে বাড়িঘর করে সেখানে বসবাস করছে। এদিকে, ঋণের টাকা আদায় করতে না পেরে আমাদের নানাধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অথচ আমরা তো নিজেদের প্রয়োজনে তাদের ডেকে এনে ঋণ দিইনি, আমরা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
ঋণ আদায়ে অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমরা বারবার তাগাদা দিয়েছি, মামলা করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে আর কী করতে পারি! সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। তারা যাতে সামাজিকভাবে হেয় হন, তাদের মধ্যে যেন বোধোদয় হয় যে, ব্যাংকের টাকাগুলো জনগণের টাকা, এগুলো ফেরত দেয়া উচিত।’
‘এসব লোকজন ব্যাংকের টাকা মেরে ফুটানি দেখায়, পাজেরো গাড়ি হাঁকিয়ে ঘোরে, লোকজন দেখে ভাবেন, ও মারে- অনেক বড় শিল্পপতি ! আবার এলাকায় গিয়ে, গ্রামে গিয়ে দান-খয়রাতও করে, মানুষের কাছে দানবীর সাজে। অথচ বছরের পর বছর ধরে তারা ব্যাংকের টাকাগুলো পরিশোধ করছে না, একেকজনের যে পরিমাণ লোন, পাল্লায় তুলে দশবার মাপলেও সেটার সমান হবে না,’– বলেন আনোয়ারুল হক।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম